Homeসব খবরজেলার খবর‘পানির দরেও’ বিক্রি হচ্ছে না তরমুজ

‘পানির দরেও’ বিক্রি হচ্ছে না তরমুজ

বরিশাল জেলায় এবার এক হাজার ৪৬ হেক্টর, বরগুনায় ১৫ হাজার ৮৩৮ হেক্টর, ভোলায় ১৮ হাজার ৩৮৩ হেক্টর, পিরোজপুরে ১১৬ হেক্টর, পটুয়াখালীতে ২৮ হাজার ৭৪৫ হেক্টর এবং ঝালকাঠিতে ৫৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করা হয়েছে। বেশির ভাগ জায়গায়ই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে, কিন্তু বৃষ্টিতে তরমুজের ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টিতে তরমুজ ও তরমুজের গাছ জমিতেই নষ্ট হয়েছে।

কৃষকরা জানিয়েছেন, বরিশাল বিভাগের ভোলা, বরগুনাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে চাষিরা আড়তে তরমুজ নিয়ে এসেছেন। কিন্তু কোনো আড়তদারই কাঙ্ক্ষিত দাম বলছেন না। তাই চাষিরাও তরমুজ বিক্রি করতে পারছেন না। এতে ট্রলারেই তরমুজ পচতে শুরু করেছে। ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বড় আকারের একেকটি তরমুজ। তাও কেনার আগ্রহ নেই ক্রেতা ও আড়তদারদের। এরই মধ্যে অধিকাংশ তরমুজে পচন ধরেছে। সেগুলো ফেলা হচ্ছে বরিশাল নগরীর পোর্টরোড খাল থেকে শুরু করে আশপাশের এলাকার ডাস্টবিনে।

গতকাল সোমবার বরিশালের পাইকারি ফলের আড়ত পোর্ট রোডে দেখা গেছে, কীর্তনখোলা নদীর শাখা জেলখালের প্রবেশমুখে তরমুজবোঝাই শত শত ট্রলার খালাসের অপেক্ষায়। ট্রলার থেকে সময়মতো খালাস না করায় তরমুজ পচতে শুরু করেছে। চাষিদের ফেলে দেওয়া তরমুজে খালের পাড়ে স্তূপ জমেছে। আড়তের পাশে খোলা জায়গায় ফেলে দিয়েছেন অনেকে। সেগুলো গরু খাচ্ছে।

সুমন পাটোয়ারী নামের এক মাঝি জানান, তিনি সকাল ৮টায় এসেছেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তিনি আড়তের ঘাটে পৌঁছতে পারেননি। শত শত ট্রলার আগে থেকেই তরমুজ নিয়ে ঘাটে ভিড়ে রয়েছে। এ জন্য ঘাটে ট্রলারের জট তৈরি হয়েছে।

ইমরান মাঝি বলেন, ‘আড়তদাররা ট্রলার হিসেবে কিনে শ’ হিসেবে বিক্রি করছেন। ট্রলার থেকে আড়তে তোলার সময় পচন ধরা তরমুজ ফেলতে হচ্ছে খালে। এর আগে ক্ষেত থেকে শুরু করে আড়তে আসা পর্যন্ত বহু তরমুজ পচে যাওয়ায় নদী ও খালে ফেলে দিয়েছি।’

কৃষক মো. রিপন বলেন, ‘এ বছর দুই কানি জমি লিজ নিয়ে তরমুজ চাষ করেছি। ফলন দেখে বুক ভরে গিয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টি সব তছনছ করে দিয়েছে। এখন কোনোভাবে বিনিয়োগকৃত টাকা তুলতে পারলে বাঁচতাম। তবে কোনোভাবেই বিনিয়োগকৃত টাকা উঠবে না, এটা নিশ্চিত।’

বাকেরগঞ্জের তরমুজ চাষি নূর হোসেন বলেন, ‘বাকেরগঞ্জের কালাইয়ায় ১০ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। প্রথম দিকে যা বিক্রি করেছি, তাতে ভালো দাম পেয়েছি। কিন্তু বৃষ্টির পানি তরমুজ ক্ষেতে ঢুকে সব শেষ করে দিয়েছে। তরমুজ বড় হয়েছে, কিন্তু পানসে। এ কারণে কেউ কিনতে চান না। একপ্রকার হাত-পা ধরে বিক্রি করতে হচ্ছে। তা আবার ট্রলার হিসাবে দাম বলছে। শ’ হিসাবে কেউ কিনতে চান না। যা দাম বলছেন, তাই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।’

বরগুনার বেতাগী উপজেলার তরমুজচাষি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘নালা পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম। বৃষ্টিতে ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় কী’টনাশক ও সার ছড়িয়ে পড়ে গাছ মরে যাচ্ছে। পচে যাচ্ছে তরমুজ।’

মিলন নামের এক চাষি জানান, গত বছর ভালো দাম পেলেও এ বছর তিনি খরচ তুলতে পারছেন না। কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে তিনি হতাশ। তরমুজচাষি মাসুদ বলেন, ‘তরমুজ বিক্রি করে আগামী বছর ভালোভাবে সংসার চালানোর ইচ্ছা ছিল। তা আর হলো না।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ শওকত ওসমান বলেন, ‘তরমুজের মৌসুমে বৃষ্টির ভয় থাকে কৃষকদের। প্রথমপর্যায়ে যারা তরমুজ তুলেছেন তারা ভালো দাম পেয়েছেন। কিন্তু গত মাসের শেষ দিকে বৃষ্টিতে তরমুজ ক্ষেতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের হিসাবে, ১৫ শতাংশ তরমুজের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এতে বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন কৃষকরা। তবে লোকসান পোষাতে প্রণোদনা দেওয়া হবে তাদের।

Advertisement