Homeসব খবরজেলার খবরদেড় হাজার কোটি টাকার পশু বিক্রির সম্ভাবনা

দেড় হাজার কোটি টাকার পশু বিক্রির সম্ভাবনা

ঈদুল আজহার আর মাত্র দুইদিন বা‌কি। ঈদ‌কে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গায় জমে উঠেছে ৪ বড়সহ মোট ১১টি পশুর হাট। হাটগুলোতে বাড়ছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ভিড়। কোরবানির পশুর দামও ভালো বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা। পশু কিনতে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্য চলছে দর কষাকষি।

চুয়াডাঙ্গার শিয়ালমারী পশুহাট, ডুগডুগি পশুহাট, মুন্সিগঞ্জ পশুহাট এবং আলমডাঙ্গা পশুহাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এবা‌রের কোরবা‌নি ঈদে প্রায় ১ হাজার ৬১ কোটি টাকার পশু বি‌ক্রি হ‌বে ব‌লে আশা করা হ‌চ্ছে।

গত সোমবার (১০ জুন) ডুগডুগি পশুহাটে গরু বিক্রি করতে আসা জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় এখন গরু ও ছাগলের দাম তুলনামূলক বেশি। আজকে হাটে তিনটি গরু এনেছিলাম বিক্রির জন্য। পাঁচ হাজার টাকা করে লাভে দুটি গরু বিক্রি করেছি। আরেকটা গরুর আশানুরূপ দাম না হওয়ায় বিক্রি করিনি। আগামী হাটে বিক্রি করবো।

মৃগমারী গ্রামের গরু ব্যবসায়ী মো. হাবেল উদ্দীন বলেন, অন্য দিনের তুলনায় আজকের হাটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাপারীরা এসেছেন। এ কারণে গরুর দামও বেশি। আজকে হাটে পাঁচটা গরু এনেছিলাম। সবগুলো গরু বিক্রি হয়ে গেছে। লাভও বেশি হয়েছে। গরুর দাম এরকম থাকলে গরু পালনকারীরা লাভবান হবেন।

হাটে পশু কিনতে আসা মাজেদুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, প্রতিবছর খামার থেকে গরু কিনে থাকি। খামার থেকে গরু কিনলে সুবিধা রয়েছে। ঈদ পর্যন্ত গরু খামারে রাখা যায়। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয় না। তবে এ বছর গরুর দামটা একটু বেশি।

হাটে গরু কিনতে আসা আবুল হো‌সেন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, কোরবানি করার জন্য মাঝারি গরু খুঁজছি। এ বছর গরু প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাম বেশি মনে হচ্ছে। যেহেতু কোরবানি করতে হবে তাই বেশি দাম দিয়েই গরু কিনতে হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ হাজার ৯১৭টি খামার রয়েছে। এরমধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২ হাজার ৬৭৬টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩ হাজার ৫৯৯টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১ হাজার ৯২৮টি এবং জীবননগর উপজেলায় ২ হাজার ৭১৪টি। এসব খামারে কোরবানি উপলক্ষে ২ লাখ ১১ হাজার ৮৭৯টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে গরু ৫৪ হাজার ৮৯১টি, মহিষ ১৬০টি, ছাগল ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৬টি, ভেড়া ৩ হাজার ৯২৫টি এবং অন্যান্য ৭টি।

এবার জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৬ টি। সে হিসাবে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৫৩ হাজার ২৩টি কোরবানিযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এসব পশু ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হবে।

চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে আলমডাঙ্গায় ৭৯ হাজার ৭০৫টি। এ উপজেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৫৯ হাজার ৭৭৯টি। যা থেকে ১৯ হাজার ৯২৬টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৪১ হাজার ৬২৭টি পশুর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৩১ হাজার ২২০টি। অবিক্রিত থাকবে প্রায় ১০ হাজার ৪০৭টি পশু। দামুড়হুদা উপজেলায় ৪২ হাজার ৭৮টি পশুর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৩১ হাজার ৫৫৯টি। যা থেকে উদ্বৃত্ত থাকবে ১০ হাজার ৫১৯টি পশু। এবং জীবননগর উপজেলায় ৪৮ হাজার ৩৯৭টি পশুর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৩৬ হাজার ২৯৮টি। অবিক্রিত থাকবে প্রায় ১২ হাজার ৯৯টি পশু।

চুয়াডাঙ্গা জেলার মোট ১১টি পশুহাটের মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট বসে ডুগডুগি ও শিয়ালমারিতে। প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার এই দুই হাটে কয়েক হাজার পশু কেনাবেচা হয়। এসব হাটে দেশীয় প্রজাতির বহু সংখ্যাক গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল ওঠে। কিন্তু এবার কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে হাটগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেলেও বিক্রি সেভাবে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন গরুর খামারি ও ব্যবসায়ীরা।

দামুড়হুদা উপজেলা সদ‌রের দশমী গ্রামের খামা‌রি আতিয়ার রহমান বলেন, ৫/৬ বছর আগে খামার গড়েছিলাম। খামারে মোট ১৫টি গরু রয়েছে। এরমধ্যে ১৩টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যদি গরুর দাম বর্তমান বাজারমূল্য থাকে তাহলে খামারিরা লাভবান হবেন।

একই উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের খামারি রহমত আলী বলেন, পাঁচ বছর আগে শখের বশে একটি খামার তৈরি করি। আমার খামারে বর্তমানে ১০টি গরু রয়েছে। যার মধ্যে তিনটি গরু বিক্রি করেছি। বাকি গরু ঈদের মধ্য বিক্রির আশা করছি। যদি এমন দাম থাকে তাহলে লাভবান হতে পারবো।

জীবননগর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের খামারি আবুল বাশার বলেন, আমার খামারে ৪০টি কোরবানি উপযুক্ত গরু ছিল। ৩৫টি গরু এরই মধ্যে ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। এখনো আমার খামারে ১০টি গরু আছে। এই গরুগুলো আরও সাইজে বড়। বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত বলতে পারছি না লাভ হবে, না লোকসান হবে।

তিনি আরও বলেন, খাবারের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি। এলাকায় বিক্রি উপযুক্ত কোরবানির গরু গত বছরের তুলনায় কম। বেচাকেনা গত বছরের তুলনায় কম।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শামীমুজ্জামান শামীম জানান, চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলায় মোট ১০ হাজার ৯১৭ জন খামারি এবার পশু লালন-পালন করেছেন। এর বাইরে ব্যক্তি পর্যায়েও অনেকে পশু পালন করেছেন। এ বছর চুয়াডাঙ্গায় যে পরিমাণ গরু ও মহিষ আছে, তার বাজার মূল্য ৮২৫ কোটি টাকা এবং ছাগল ও ভেড়ার বাজার মূল্য ২৩৬ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে চলতি মৌসুমে প্রায় ১ হাজার ৬১ কোটি টাকার লেনদেন হবে। খামারিদের পালন করা পশু ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাহিদা পূরণ করবে। খামারিরা এবার কোরবানির পশুর ন্যায্যমূল্য পাবেন।

তিনি আরও বলেন, খামারিরা যেন লাভবান হতে পারেন, সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে যেন পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অবৈধভাবে কোনো পশু আসতে না পারে, সে জন্য আমরা প্রতিনিয়ত প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এছাড়া জেলার চারটি বড় পশুহাটে আমাদের পক্ষ থেকে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম থাকছে। এখান থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই যেকোনো পরামর্শ নিতে পারবে।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান জানান, পশুর হাটগুলোর নিরাপত্তার জন্য পুলিশের মোবাইল টিম কাজ করছে। গরুর হা‌টে জাল নোট, অজ্ঞান পা‌র্টির সদস্যদের ঠেকানোর জন্য পুলিশের নজরদারি রয়েছে। এরম‌ধ্যে গত ৪ দিন জেলার বি‌ভিন্ন এলাকায় অভিযান চা‌লিয়ে পু‌লিশ অজ্ঞান পা‌র্টির ৬ সদস্য‌কে কে‌মি‌কেলসহ আটক কর‌তে সক্ষম হ‌য়ে‌ছে। এছাড়া ব্যাপারিদের পশু আনা-নেয়ার ক্ষেত্রেও পুলিশের বাড়তি নজরদারি রয়েছে।

সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ।

Advertisement