Homeসব খবরজেলার খবরক্রেতা না পেয়ে মানিককে নিয়ে চিন্তিত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী

ক্রেতা না পেয়ে মানিককে নিয়ে চিন্তিত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী

শখ করে লালন-পালন করা ৫ বছর বয়সী মানিকের ওজন এখন প্রায় ৪৫ মণ। কোরবানির পশুর মধ্যে এটি টাঙ্গাইলের সবচেয়ে বড় ষাঁড়। বাড়ির নিজস্ব গাভী থেকে জন্ম নেওয়া বাছুরটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে শখ করে বড় করতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী হামিদা আক্তার। এত বড় ষাঁড়ের ক্রেতা না পাওয়ায় অনেকটা বিপাকে পড়েছেন হামিদা।

গত কোরবানির ঈদে রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে ষাঁড়টি বিক্রির জন্য তোলা হলেও ক্রেতা না পাওয়ায় ষাঁড়টি ফেরত আনতে হয় হামিদাকে। বরং ষাঁড়টি গাবতলী হাটে আনা-নেওয়া, হাটে চারদিন রাখার খরচ বাবদ হামিদাকে গুনতে হয় প্রায় নব্বই হাজার টাকা। এবারের কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে এলেও এতো বড় ষাঁড়ের আশানুরূপ ক্রেতা মিলছে না। ফলে এই নারী উদ্যোক্তা জীবনের শুরুতেই হোঁচট খাচ্ছেন। মানিককে পালনকালী উদ্যোক্তা হামিদা টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটী ইউনিয়নের ভেঙ্গুলিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদ ও রিনা বেগমের কন্যা। শখ থেকে খামার করার স্বপ্ন হামিদার।

উদ্যোক্তা হতে শিক্ষা জীবনেই নানা উপার্জন মাধ্যমে জড়িয়ে পড়েছেন হামিদা। বাড়িতেই একটি মনিহারি দোকানে ফ্লেক্সিলোড, বিকাশ এজেন্ট ও টেইলারিংয়ের কাজ করেন। উপার্জনে বড় অংশই ব্যয় করেছেন মানিকের পেছনে। হামিদা করটিয়া সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অর্নাস (ইতিহাস)-এর শেষ বর্ষের ছাত্রী।এবারের কোরবানির ঈদে ৪৫ মণ বা ১৮০০ কেজি ওজনের মানিককে বিক্রির জন্য চেষ্টা করছেন। যার দাম হাকাচ্ছেন ১৫ লাখ টাকা। জেলার সবচেয়ে বড় এই ষাঁড়টি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন মানুষ আসছেন হামিদার বাড়িতে। ন্যায্য দামে ষাঁড়টি বিক্রি হলে তার খামার করার স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হবে, এমনটাই মনে করছেন হামিদা।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী হামিদা আক্তার বলেন, পরিবারের সদস্যের মতোই মমতা দিয়ে বড় করছেন তার অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের মানিককে। গরুর ঘরে রয়েছে দুটি সিলিং ফ্যান আর মশারি। নিয়মিত খাবারের তালিকায় রয়েছে খড়, ভুষি, কাঁচাঘাস, মাল্টা, পেয়ারা, কলা, মিষ্টি কুমড়া ও মিষ্টি আলু। রোগ জীবাণুর হাত থেকে বাঁচতে প্রতিদিন তাদের সাবান আর শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানো হয়।

হামিদা বলেন, ৫ বছর আগে তার নিজের খামারের ফ্রিজিয়ান জাতের একটি গাভী থেকেই জন্ম নেয় মানিক । গত কোরবানির হাটে ওই ষাঁড়টি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তিনি। গত বছরই মানিকের ওজন ছিল ৩৫ মণ । ক্রেতা না পাওয়ায় আরেকটি বছর মানিককে পালন করতে হচ্ছে হামিদাকে। গতবছর মানিককে ঢাকার গাবতলী হাটে ওঠানো হয়। তবে করোনার কারণে হাটে নিয়েও সুবিধা হয়নি। আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় মানিককে ফিরিয়ে আনে হামিদা। বর্তমানে মানিকের পেছনে দৈনিক খাবার লাগছে ১৭ কেজি গমের ভূষি, ৪ কেজি ছোলা, ২ কেজি খুদের ভাত, আধা কেজি সরিষার খৈল। এছাড়াও দৈনিক তাকে খাওয়ানো হচ্ছে নানা জাতের পাকা কলা। গত এক বছর লালন পালন করে বর্তমানে মানিকের ওজন ৪৫ মণ।

হামিদা আরও বলেন, আমরা বাড়ি থেকেই ষাঁড় বিক্রি করার চেষ্টা করছি। বাড়িতে এসে যদি কোনো ক্রেতা ন্যায্য দাম বলেন, সেক্ষেত্রে আমরা নিজ খরচে মানিককে ক্রেতাদের বাড়িতে পৌঁছে দেব। আসা করছি এ বছর ভালো দামে মানিককে বিক্রি করতে পারবো। লেখাপড়া করেও গরু লালন পালন করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে হামিদা বলেন, আমি পড়ালেখা করছি, চাকরি করার জন্য নয়। আমার স্বপ্ন আমি একজন বড় খামারি হবো। এ বছর যদি ভালো দামে আমি মানিককে বিক্রি করতে পারি, তবে সেই টাকায় আমি আমার স্বপ্নের খামারটি সাজাবো। ওই খামারে লালন পালন করবো উন্নত জাতের সব গরু। শুরুতেই হোঁচট খেলে স্বপ্ন ভেঙে যাবে। সেক্ষেত্রে ষাঁড় পালন বন্ধ করে দুগ্ধ গাভি পালন শুরু করবো।

হামিদার ভাই না থাকায় উপার্জনের টাকায় নিজের ও দুই বোনের লেখাপড়ার ব্যয় বহনসহ সংসারের হাল ধরেছেন তিনি। ইতোমধ্যেই ছোট দুই বোনকে উচ্চ মাধ্যমিক পাসও করিয়েছেন। এক বোনের বিয়ে দেয়াসহ আরেক বোনকে লেখাপড়া করাচ্ছেন নার্সিংয়ে। হামিদার মা রিনা বেগম বলেন, আমার মেয়েদের জন্মের আগে থেকেই ওর বাবা গরু লালন পালন করতেন। যা দেখে হামিদাও গরু লালন পালনে আগ্রহী হয়েছে।

লাউহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন মোহাম্মদ খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী হামিদার গরু লালন পালনের বিষয়টি আমি জানি। তবে উনি কখনও সাহায্য সহযোগিতার জন্য আসেননি। যদি তিনি কখনও বড় ধরণের খামার করতে আমাদের সাহায্য সহযোগিতা চায়, তবে অবশ্যই করবো।

এ বিষয়ে দেলদুয়ার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বাহাউদ্দিন সারোয়ার রিজভী জানান, এ উপজেলায় হামিদার ষাঁড়টিই সবচেয়ে বড়। জেলার মধ্যেও বড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের অনলাইন হাটে তার ষাঁড়টির ছবি, ওজন ও দাম উল্লেখ করে বিক্রির জন্য প্রচারণা হচ্ছে। এছাড়াও আমাদের কাছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বড় ষাঁড় কেনার জন্য গ্রাহক যোগাযোগ করেন। আমরা সেই সকল ক্রেতাদেরকেও হামিদার ষাঁড়টির বিষয়ে অবগত করবো। তবে বড় ষাঁড়ের চাহিদা একটু কম। খামার কওে স্বাবলম্বী হতে চাইলে এক-দেড় লাখ টাকা বিক্রির উপযুক্ত হলেই পশু বিক্রির পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।

Advertisement