Homeঅন্যান্যএক জোড়া গাভী থেকে আজ সফল খামারি হাওয়া বেগম

এক জোড়া গাভী থেকে আজ সফল খামারি হাওয়া বেগম

ষাট বছরের হাওয়া বেগম। পাবনার ফরিদপুর উপজেলার রতনপুর গ্রামে তার বিয়ে হয়েছিল এক হতদরিদ্র পরিবারে। তার শ্বশুর ২ শতাংশ জমি পেয়েছিলেন পৈত্রিক সূত্রে। তাই স্বামী জবেদ আলী প্রামাণিকের কোনো জমি-জমা ছিল না। অভাব আর কষ্ট হাওয়া বেগম-জবেদ প্রামাণিক দম্পতির জীবনে হাত ধরাধরি করে চলতো।

এভাবে চলে যায় ৪-৫ বছর। ঘরে সন্তান জন্ম নেয়। এরপর হাওয়া বেগমের কষ্টে সঞ্চয় করা ১৮শ’ টাকা দিয়ে এক জোড়া গাভী কিনেন। স্বপ্ন ছিল তার ‘সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।’ হাওয়া বেগমের সে স্বপ্ন বৃথা যায়নি। সেই ২ গাভী থেকে আজ তার বাড়ি ভরা গাভীর এক পরিপূর্ণ খামার। মোট গরুর সংখ্যা ৪২টি। তার সন্তানদের সংসারের সব খরচ খামার থেকেই আসে। বড়াল নদী পাড়ে ‘ছবির মত গ্রাম’ রতনপুরে গিয়ে কথা হয় হাওয়া বেগমের খামারে। তিনি জানান তার খামারের সুখ-দুঃখের ৪৫ বছরের কথা।

তিনি জানান, বাড়ির জায়গা না থাকলেও এলাকায় বহু বছর আগে থেকেই ঘাসের প্রাচুর্য ছিল, ছিল গাভী পালনের বাথান। তিনি সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে চান। আর শুরু করেন গাভী পালন। তার ৩ ছেলে হাবিবুর রহমান, আব্দুল হাই ও বাকি বিল্লাহ। এদের লালন-পালনের খরচ এসেছে গাভী পালনের আয় থেকে। আবার তার তিন ছেলেও এখন খামারের উপরই নির্ভরশীল। হাওয়া বেগমের ৩ পুত্রবধূও শ্বশুরবাড়ি এসে খামার দেখাশোনা করেন।

হাওয়া বেগম জানান, তার তিন পুত্রবধূ আর তিনিই মূলত খামার দেখাশোনা করেন। তার পুত্রবধূরাই সাত সকালে গাভী দোহন করা দুধ বাড়ির কাছে নদীর পাড়ে ঘোষ এর দোকানে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তার সন্তানদের অন্যের বাড়ি কাজ করা লাগছে না। সব ছেলেই কিছুটা জমি-জমা রেখেছেন বাড়ির জায়গা বাড়িয়েছে। এসবই সম্ভব হয়েছে গাভী পালন করার জন্য। গাভী পালন করার জন্যই আজ তাদের সংসারে সচ্ছলতা। জমি-জমা না থাকা সত্ত্বেও ছেলেদের আজ অন্যের বাড়ি কাজ করতে হয় না। দুধের খামার না থাকলে তার সব ছেলেকে দিনমজুরি করা লাগত।

গৃহবধূ আঞ্জুয়ারা খাতুন জানান, বিয়ে হয়েছে প্রায় ২৪-২৫ বছর। তিনি এসে দেখেন স্বামীর সংসারে গাভী ছাড়া কোনো সম্পদ নেই। তিনি তার শ্বশুর- শাশুড়ির সঙ্গে গাভী পালনের কাজে সহযোগিতা করতে থাকেন। স্বামী অন্য কাজে নিয়োজিত থাকলেও তিনি নিজেই গাভী লালন-পালন, দোহনের কাজ করেন। তার শাশুড়ি তাকে সব কাজে এখনো সহযোগিতা করেন।

তিনি জানান, গাভীর দুধ বিক্রি করেই সংসার চলে। শুধু সংসার চালানো নয়। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। এরই মধ্যে মেয়ে এইচএসসি পাশ করেছে। অন্য দুটি সন্তান হাইস্কুলে পড়াশোনা করছে।

পুত্রবধূ মঞ্জিলা খাতুন জানান, তিনি বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সঙ্গে গাভী পালনে সহযোগিতা করতে থাকেন। এখনতো তিনি সব গাভীকে নিজেই পরিচর্যা করেন। স্বামী অন্য পেশায় থেকে বাড়তি কিছু টাকা রোজগার করতে পারছেন। তার সন্তানরা লেখাপড়া করছেন। তারাও অবসরে খামারের কাজে সহযোগিতা করে।

পুত্রবধূ সোহাগী খাতুন জানান, তিনি স্বামীর সঙ্গে গাভী পালনে সহায়তা করছেন বিয়ের পর থেকেই। শুধু সহযোগিতা নয় তিনি স্বামীকে আরো গাভী কিনিয়েছেন, খামার বড় করেছেন। ওই বাড়ির তিন পুত্রবধূই সাংসারিক সম্প্রীতির কথা জানান। তাদের খামারের কাজে তার শাশুড়ি তাদের সব সময় সহযোগিতা করেন বলে জানান।

খামারিদের দাবি, খাবারের দাম কম হলে তারা উপকৃত হতেন। এছাড়া গাভীর রোগ বালাই হলে তারা কোনো চিকিৎসা সুবিধা পান না। অনেক টাকা দিয়ে ‘গরুর ডাক্তার’ বাড়ি আনতে হয়।

খামারের মূল উদ্যোক্তা হাওয়া বেগম জানান, সরকার কৃষকদের কার্ড দেয়। এতে তারা সার পায়, টাকা পায়। আমরা খামারি হিসেবে সরকারি ভর্তুকি পেলে আরো লাভবান হতে পারতাম।

পাবনা জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আল মামুন হোসেন মন্ডল জানান, হাওয়া খাতুনের পরিবারের মতো অনেক প্রান্তিক শ্রেণির পরিবার গাভী পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এবার খামারিরা দুধের ভালো দাম পাচ্ছেন। সরকার খামারিদের প্রতি সব সময়েই আন্তরিক। তিনি জানান, প্রাণি সম্পদ অফিস সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করেন।

সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ।

Advertisement