Homeঅন্যান্যসবজির দেশে গোলাপের সুবাস ছড়ালেন ৩ ভাই

সবজির দেশে গোলাপের সুবাস ছড়ালেন ৩ ভাই

সবজি প্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত উত্তরের জেলা পাবনা। কিন্তু সেই সবজির দেশে এবার গোলাপের সুবাস ছড়িয়েছেন তিন ভাই। মাত্র দুই বছরে বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ ফুলের চাষ করে সফলতাও পেয়েছেন তারা। ৬ বিঘা জমিতে খরচ বাদে প্রতিমাসে তাদের লাভ দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। ফলে বেড়েছে সবজির দেশে ফুল চাষের সম্ভাবনা।

গোলাপের সুবাস ছড়ানো তিন ভাই হলেন পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের ভজেন্দ্রপুর গ্রামের মৃত খন্দকার এ কে আব্দুল্লাহ (বাদশা) ও মৃত রোকেয়া বেগম দম্পতির ছেলে খন্দকার জাফর উল্লাহ (টকুন), খন্দকার শরীফুল আলম রানা ও খন্দকার আশরাফুল বারী শাহীন। তারা ছয় ভাই ও পাঁচ বোন। ভাইদের মধ্যে সবার বড় খন্দকার জাফর উল্লাহ, মেজো খন্দকার শরীফুল আলম রানা ও ছোট খন্দকার আশরাফুল বারি শাহীন।

আলাপকালে জানা গেছে, ভাইদের মধ্যে মেজো ভাই খন্দকার শরীফুল আলম রানা ১৯৯১ সাল থেকে নার্সারি ব্যবসার সাথে যুক্ত। তিনিই প্রথম ফুল চাষের কথা ভাবেন। যেহেতু জমি যৌথ মালিকানা সম্পত্তি, তাই তিন ভাই মিলে গোলাপ ফুল চাষের সিদ্ধান্ত নেন।

তাদের পূর্ব পুরুষ থেকে বাড়ির পাশে বিশাল জমি ঘিরে বাঁশ বাগান ছিল। সেখান থেকে ৬ বিঘা জমির বাঁশ বাগান তুলে দিয়ে ফুল চাষের জন্য প্রস্তুত করেন। প্রথমে গাজীপুরের মাওনা এলাকার দেলোয়ার হোসেনের নার্সারী থেকে ১০ হাজার গোলাপের চারা কেনেন তারা। এর তিন মাস পর ভারত থেকে ১৫ হাজার এবং তার ছয় মাস পর ভারত থেকে আরও ১১ হাজার গোলাপের চারা সংগ্রহ করেন। এই মোট ৩৬ হাজার গোলাপের চারা দিয়ে ২০২১ সালের ১ আগস্ট তিন ভাইয়ের যৌথ গোলাপ ফুল বাগানের যাত্রা শুরু হয়।

তাদের গোলাপ বাগানে চায়না হাইব্রিড জুমুলিয়া, বিউটি, ভারগো, বমবম এই চারটি জাতের গোলাপ চাষ হচ্ছে। আবার এসব গোলাপ ফুল হয় বাহারি রঙের। সাদা, হলুদ, অরেঞ্জ, লাল, শেডপিংক, ডিপ পিংক, সিঁদুর এই সাত রঙের গোলাপ পাওয়া যাচ্ছে এই ফুল বাগানে। প্রথমে ২ জন কর্মচারী দিয়ে তাদের কাজ শুরু হলেও বর্তমানে গোলাপ বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে ৬ জনের। আর তাদের পেছনে মাসিক বেতন বাবদ খরচ হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে বড় ভাই খন্দকার জাফর উল্লাহ (টকুন) বলেন, ‘বাঁশ বাগান থেকে বাঁশ বিক্রি করে বছরে আসতো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ফুল চাষে বিঘা প্রতি ৬ লাখ টাকা করে ৬ বিঘা জমিতে মোট খরচ হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা। আর এখন সেখান থেকে প্রতি মাসে আয় হচ্ছে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা। লোকসান নেই। আয় ভালোই হচ্ছে। বলা যায় ফুলচাষ লাভজনক।’

মেজো ভাই খন্দকার শরীফুল আলম রানা বলেন, ‘আমি নার্সারির ব্যবসা করি দীর্ঘ বছর ধরে। ঢাকাতে আমার ব্যবসা আছে। ভাবলাম গ্রামে ব্যতিক্রম কিছু করা যায় কি না। যেহেতু আমি গাছ ও ফুল প্রেমিক মানুষ। তাই ভাবলাম ফুলের চাষ করা যায়। সেই ভাবনা থেকে আমার আর দুই ভাইকে সাথে নিয়ে গোলাপ ফুলের চাষ শুরু করি। পাবনায় বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ ফুলের চাষ আমরাই প্রথম শুরু করলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে পাবনায় ফুলের বাজারজাতকরণের একটা সমস্যা আছে। আমরা বর্তমানে পাবনা শহর, ঈশ্বরদী, আটঘরিয়া, চাটমোহর উপজেলা এবং ঢাকা শহরে ফুল বিক্রি করছি। আশা করছি ফুলের আবাদ বাড়বে এবং বাজারজাতকরণের সমস্যা কেটে যাবে।’

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ৩ লাখ টাকার গোলাপ বিক্রি করেছিলেন। এবারের ফেব্রুয়ারিতেও ৪ লাখ টাকার ফুল বিক্রির আশা করছেন তিনি।

ছোট ভাই খন্দকার আশরাফুল বারি শাহীন বলেন, ‘গোলাপ ফুল বা যেকোনো ফুল চাষ খরচের তুলনায় লাভজনক। বিশেষ করে অন্য ফসল বা সবজি আবাদের চেয়ে লাভ অনেক বেশি। রোগবালাই না থাকলেও, একটু পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে পারে। তবে ঠিকমতো যত্ন নিলে পোকার আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কৃষি বিভাগ সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আমাদের পাশে আছে।’

এ বিষয়ে পাবনা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহানা পারভীন লাবনী বলেন, ‘দেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যে কারণে দেশের বাইরে থেকেও আমাদের ফুল আমদানি করতে হয়। ফুল চাষ যেহেতু লাভজনক ফসল, সেকারণে পাবনায় ফুলের চাষ বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। যাতে এখানকার উৎপাদিত ফুল দিয়ে জেলার চাহিদা মেটানো যায়, পাশাপাশি অন্য জেলাগুলোতেও ফুল সরবরাহ করতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা কৃষি বিভাগ তিন ভাইয়ের গোলাপ চাষে সবসময় পাশে থেকে পরামর্শ ও নানারকম সহযোগিতা করে আসছে। তাদের দেখে জেলার অন্যান্য কৃষকও ফুল চাষে আগ্রহী হবেন বলে প্রত্যাশা করছি।’

সূত্র: রাইজিংবিডি।

Advertisement