Homeঅন্যান্যশত শত পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন রেল...

শত শত পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন রেল কর্মকর্তা অসীম

বাংলাদেশ রেলের এমনিতে নানা নেতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে। কিন্তু, এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সময়মতো অংশ নেওয়া নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশংসায় ভাসছেন দুই রেল কর্মকর্তা। এরা হলেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক এবং পাকশি বিভাগীয় ব্যবস্থাপক। ইতোমধ্যেই তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, মঙ্গলবার ঢাকা টু রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর থেকে বিলম্বে ছেড়েছে। ট্রেনটি ভোর ৬টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে রাজশাহী পৌঁছার কথা বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে। সেই হিসাবেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক শত শত শিক্ষার্থী কমলাপুর স্টেশনে অপেক্ষা করেন। কিন্তু সেই দিন ট্রেনটি বিলম্বে কমলাপুর থেকে ছাড়ে। মঙ্গলবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরুর সময় ছিল বিকাল ৩টা ৩০ মিনিট। কিন্তু কমলাপুর থেকে বিলম্বে ট্রেন ছাড়ায় রাজশাহীতে পৌঁছানোর কথা বিকাল ৪টায়।

অসীম কুমার জানান, এমন অবস্থায় আমাদের মাথার উপর যেন পাহাড় ভেঙে পড়েছিল। ট্রেন প্রায় ৪ ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌঁছালে এর ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। কিছুতেই চাকা ঘুরছিল না।
শিক্ষার্থীরা সবাই তখন হতাশ হয়ে পড়েছিল। পুরোপুরি ট্রেনটি বসে যাওয়ায় বিকল্প ইঞ্জিনও পাওয়া যাচ্ছিল না। নীলফামারী থেকে ঢাকাগামী চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেন তখন শরৎনগর স্টেশনে ছিল। সেই ট্রেনের ইঞ্জিন কেটে ধূমকেতু এক্সপ্রেসে যুক্ত করে ছাড়া হয় ট্রেন। কিন্তু এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে যায় অনেকটা সময়।

অসীম কুমার আরও বলেন, সেই সময় পুষিয়ে নিতে যা যা প্রয়োজন তা করতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। কারণ, সাড়ে ৩টার আগে ট্রেন রাজশাহী পৌঁছাতে না পারলে কেউ পরীক্ষা দিতে পারবে না।

ট্রেনচালক এবং গার্ডকে ফোন করে বলা হয় নির্ধারিত গতির চেয়ে সর্বোচ্চ গতিতে ট্রেনটি চালাতে। বিশেষ ভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয় পাকশি রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সুফি নূর মোহাম্মদকে। তিনিও নেমে পড়েন মাঠে। স্টেশনে স্টেশনে যোগাযোগ স্থাপন করে সিগন্যাল সক্রিয় রাখা হয়।

অসীম কুমার তালুকদার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরীক্ষার সময় পেছানোর অনুরোধ করেন। সেই অনুরোধ রাখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষও বারবার ফোন করে ট্রেনের অবস্থান জানতে শুরু করে।

জানা গেছে, ট্রেন দ্রুত রাজশাহী পৌঁছাতে পুরো পশ্চিমাঞ্চল রেলেকে একত্রিত করে ফেলেন অসীম কুমার। মাঠপর্যায় থেকে কর্মকর্তা-সবাইকে বার্তা পাঠানো হয় ট্রেন যেন বেশি গতিতে চালিয়ে রাজশাহী পৌঁছানো হয়।
এই চেষ্টায় দুটি ট্রেনের যাত্রা বিলম্ব করতে হয়েছে, উলটো পাশের একটি ট্রেন থামিয়ে তার ইঞ্জিন কেটে নেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত স্টেশনে যাত্রাবিরতি বাতিল করতে হয়েছে তিনটি স্টেশনে। একই সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্ধারিত স্টেশনে যাত্রাবিরতি করা হয়েছে শুধু ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের জন্য।

ডিআরএম শাহ সুফি নূর মোহাম্মদ বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী ট্রেনটি সর্বোচ্চ গতি নিয়ে চালানো হয়। বেশ কয়েকটি স্টেশনে যাত্রা বাতিল করা হয়। পূর্ণগতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে ট্রেনটি পৌঁছে বিকাল ৩টা ৩৭ মিনিটে। তখন স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ স্টাফরাও। তারা বিভিন্ন পরিবহণে পরীক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান। তিনি বলেন, আমি মনে করি আমরা যা করেছি তা হৃদয় দিয়ে করেছি। কারণ এদের মধ্যেই কেউ না কেউ একদিন রেলের কর্মকর্তা হবেন। দেশ চালাবেন। এদের স্বপ্ন পূরণে আমরা সঙ্গী হয়েছি মাত্র।

তিনি বলেন, ধূমকেতু এক্সপ্রেসের রাজশাহী ইউনিভার্সিটি স্টেশনে যাত্রাবিরতি নেই। এর যাত্রাবিরতি আড়ানী স্টেশনে। আড়ানী স্টেশনে স্টপেজ আছে, সেটি বাতিল করা হয়েছে। যাত্রীদের বলেছি তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন বা রাজশাহী স্টেশনে নামতে পারবেন। এরপর অন্য ট্রেনে আড়ানীতে ফিরতে পারবেন। পরীক্ষার্থীদের কথা জানিয়ে ট্রেনে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ঘোষণায় শত শত যাত্রী কষ্ট মেনে নিয়েছেন।
চিলাহাটি ট্রেনের যাত্রীদের ধন্যবাদ জানিয়ে এই রেল কর্মকর্তা বলেন, সেই ট্রেনের ইঞ্জিন কেটে নেওয়া হয়েছে। তারা বাধা দেননি। এটা নিশ্চয় অসাধারণ বিষয়। রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রেলের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার ও পাকশী বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শাহ সুফী নূর মোহাম্মদের বিশেষ উদ্যোগে মঙ্গলবার ধূমকেতু এক্সপ্রেসের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছেন।

বুধবার এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। তিনি জানান, ধূমকেতু এক্সপ্রেসে থাকা আনুমানিক ১২৫ জন পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছি। তাদের প্রায় ২০ মিনিটের মতো দেরি হয়েছিল। কিন্তু মানবিক দিক বিবেচনায় আমরা তাদের সুযোগ দিয়েছি।

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর আসাবুল হক জানান, আমরা গর্ববোধ করছি রেলে এমন অসাধারণ কর্মকর্তা রয়েছেন। একই সঙ্গে আমাদের শিক্ষার্থীদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ট্রেনটি ৩টা ৩৭ মিনিটে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে। এ ট্রেনটি এ স্টেশনে বিরতি দেওয়ার কথা নয়। শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য তা করা হয়েছে।

সূত্র: যুগান্তর।

Advertisement