Homeঅন্যান্যযেভাবে সবার প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেন গোপাল দা

যেভাবে সবার প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেন গোপাল দা

৫০ বছরের বেশি সময় ধরে মাগুরার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পাড়া মহল্লায় আইসক্রিম বিক্রি করে আসছেন গোপাল বিশ্বাস। দীর্ঘ সময় ধরে আইসক্রিম বিক্রি করতে করতে গোপাল দা যেন শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সকলের কাছে হয়ে উঠেছেন অত্যন্ত প্রিয় মানুষ। শহরে থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের ছোট বড় সকলের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তি আইসক্রিম বিক্রেতা গোপালকে দেখলেই শিশু-কিশোর থেকে প্রবীণরাও তাকে গোপাল দা গোপাল দা বলে চিৎকার করে ওঠে।

৪০ বছর আগে যেসব শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা তার কাছ থেকে আইসক্রিম খেত, তারা এখন নিজ নিজ পেশায় হয়েছেন প্রতিষ্ঠিত। কেউ কেউ হয়েছেন শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাডভোকেট, সাংবাদিক, এমপি এবং বিচারপতি। তাদের ঘরেও সন্তান হয়েছে। কিন্তু তাদের সন্তানরাও স্কুল-কলেজে অথবা রাস্তা-ঘাটে গোপাল দা, গোপাল দা বলে ডাকে। এভাবেই যেন সকলের কাছে আইসক্রিম বিক্রেতা গোপাল দা অতি প্রিয় মানুষে পরিণত হয়েছেন।

ছাত্র জীবনে গোপাল দার কাছ থেকে আইসক্রিম কিনে খেতেন অ্যাডভোকেট কাজী মিহির। তিনি বলেন, আমি তখন ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (বতর্মান মডেল সরকারি বিদ্যালয়) চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তাম। আমাদের স্কুল জীবনে গোপাল দার সেই আইসক্রিম ছিল সকলের অত্যন্ত প্রিয় মালাই। তখন একটা মালাইয়ের দাম ছিল আটআনা আর একটু ভালো মালাইগুলোর দাম ছিল ১ টাকা। অনেক সময় কাছে পয়সা না থাকলেও গোপাল দা, হাসিমুখে আমাদের আইসক্রিম দিতেন। আজ আমার সন্তান অক্ষর এই স্কুলেই পড়ে। সেও তাকে গোপাল দা বলে ডাকে। এভাবেই যুগ যুগ ধরে সকলের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছেন গোপাল দা।

মাগুরা-১ আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, আমাদের শৈশবের সবচেয়ে আনন্দের বিষয় ছিল টিফিনের সময় গোপাল দার আইসক্রিম খাওয়া। এবং কে কয়টা খেতে পারে তার একটা প্রতিযোগিতা। গোপাল দার আইসক্রিম ছিল আমাদের পছন্দের প্রথম স্থানে। আমি তখন সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। এমন কোনো দিন নেই যে, গোপাল দার আইসক্রিম খাওয়া হয়নি। স্কুল ছুটি হলে অথবা টিফিনের সময় গোপাল দার আইসক্রিমের বাক্সের কাছে সবাই দল বেধে যেতাম। এটি ছিল আনন্দের বিষয়। গোপাল দা ছিল আমাদের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। তার আইসক্রিম খায়নি, এমন মানুষ মাগুরাতে নেই বললেই চলে! আমার মতো হাজারো ছেলেমেয়ের স্কুল জীবনের শৈশবজুড়ে গোপাল দা এবং তার আইসক্রিম আছে। আজও মাঝেমধ্যে দেখা হলে গোপাল দা ছুটে আসেন আইসক্রিম খাওয়াতে।

আইসক্রিম বিক্রেতা পারনান্দুয়ালি গ্রামের গোপাল বিশ্বাস বলেন, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যখন গোপাল দা বলে ডাক দেয়, তখন খুব ভালো লাগে। টাকা না থাকলেও শিশুদের হাতে একটা আইসক্রিম তুলে দিতে পারলে খুবই তৃপ্তি পাই। কাঁধে করে অথবা মাথায় করে আইসক্রিমের বাক্স নিয়ে স্কুলে স্কুলে পাড়া মহল্লায় ঘুরে ঘুরে আইসক্রিম বিক্রি করছি ৫০ বছর ধরে। কিন্তু এখন একটি আইসক্রিম বিক্রির ভ্যান গাড়ি পেয়েছি। তাই আগের মতো কষ্ট হয় না। এক সময় যেসব ছেলেমেয়েরা আমার কাছ থেকে স্কুল জীবনে আইসক্রিম খেত তারাই এটি আমাকে উপহার দিয়েছে। জীবনে আর যে কদিন বেঁচে থাকি এভাবেই শিশুদের আইসক্রিম খাওয়াতে চায়।

সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ।

Advertisement