Homeসব খবরজেলার খবর‘বুক ফেটে কান্না আসে, মা রেজাল্ট দেখতে পেল না’

‘বুক ফেটে কান্না আসে, মা রেজাল্ট দেখতে পেল না’

‘আমার এইচএসসি ফলাফল নিয়ে মায়ের খুব উৎসাহ ছিল। পরীক্ষার সময় রাত জেগে সময় দিতেন। বাড়ির আশপাশের সবাইকে বলেছিলেন পাস করলে মিষ্টি খাওয়াবে। কিন্তু মা আমার রেজাল্ট দেখতে পেলেন না। এটা ভাবতেই বুক ফেটে কান্না আসে। আমি মায়ের স্বপ্ন পূরণ করব।’

গতকাল সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে এইভাবে কথাগুলো বলছিলেন উম্মে জিনাত জাহান জ্বীম। জ্বীমের মা পারভীন বেগম শনিবার (২৫ নভেম্বর) গুরুদাসপুর থেকে নাটোরে তার অসুস্থ নানাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার পথে রাজশাহীর বেলপুকুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। এই দুর্ঘটনায় জ্বীমের পরিবারের মোট চার সদস্য মারা গেছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে জ্বীম বলেন, আমার মা আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। চেয়েছিলেন আমি নার্স হই। তাই রেজাল্ট হওয়ার আগেই আমাকে রাজশাহীতে নার্সিং কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়েছিলেন। রোববার প্রকাশিত ফলাফলে আমি জিপিএ ৪ দশমিক ৬৭ পেয়ে উর্ত্তীণ হয়েছি। আমার এই ভালো লাগার দিনে মা পাশে নেই।

জ্বীমের চাচা স্থানীয় চাপিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, ছোটবেলা থেকে জ্বীম লেখাপড়ায় অনেক ভালো। সে চাপিলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৪ দশমিক ৫০ পেয়ে পাস করে। এবছর সে আজম আলী কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ৬৭ পেয়ে উর্ত্তীণ হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো জ্বীমের মা তার মেয়ের ফলাফল দেখতে পেল না।

তিনি আরও বলেন, জ্বীমের মায়ের মেয়েকে নার্সিং এ পড়ানোর বেশ আগ্রহ ছিল। তাই আগেই রাজশাহীর একটি কোচিংয়ে ওকে ভর্তি করেছিল। সামনের শনিবারে জ্বীম রাজশাহীতে যাবে।

জ্বীমের বাবা জাহাঙ্গীর বলেন, আমার স্ত্রী ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় সবসময় উৎসাহ দিত। সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা স্বপ্ন দেখতো। জ্বীমের এই ফলাফল জানলে সে অনেক খুশি হতো। জ্বীমকে নিয়ে তার মায়ের স্বপ্ন যেন আমি পূরণ করতে পারি, আল্লাহ যেন সেই তৌফিক দান করেন।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার ক্যান্সার আক্রান্ত জ্বীমের নানাকে কেমোথেরাপি দেওয়ার জন্য সিএনজিতে করে রাজশাহীতে আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় জ্বীমের নানা ইউনুস আলী, মামা লাবু হোসেন ও মামাতো বোন শারমিন খাতুন এবং মা পারভীন বেগমের মৃত্যু হয়। পরের দিনে তাদের সবাইকে করবস্থানে দাফন করা হয়।

এর আগে রোববার সকাল ৯টার দিকে গুরুদাসপুর উপজেলার চককান্তপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের ঈদগাহ মাঠে দুর্ঘটনায় নিহত একই পরিবারের ৪ জনের ৩ জন ইউনুস আলী, তার ছেলে লাবু হোসেন ও নাতনি শারমিন খাতুনের জানাজা নামাজ শেষে চককান্তপুর পশ্চিমপাড়া গোরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। অন্যদিকে জ্বীমের মা পারভিন খাতুনকে বেলা ১১টায় স্বামীর বাড়ি গুরুদাসপুর উপজেলার খীদির চাপিলা গ্রামে জানাজা শেষে কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হবে বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন চাপিলা ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বর) আব্দুর রহমান।

Advertisement