Homeসব খবরজেলার খবরফসলের মাঠে ফুলের সুবাস

ফসলের মাঠে ফুলের সুবাস

জামালপুর জেলার সাতটি উপজেলার প্রত্যন্ত ফসলের মাঠে সরিষা ফুলের সুবাস চারদিক মাতোয়ারা করে তুলেছে। অগ্নিস্নান সকালের শিশির ভেজা রোদ্দুরে মৌ মৌ গন্ধে দিশেহারা হয়ে দিগবিদ্বগ ছুটছে মৌমাছির দল। মৌমাছিরা ভৌ ভৌ শব্দই ছড়িয়ে মধু সংগ্রহ করছে।

সরজমিন ফুলে ফুলে ও মৌ মৌ গন্ধে ভরা বিভিন্ন এলাকার ফসলি সরিষা ক্ষেত দেখলে যে কারো মন ভরে যায়। ফসলি মাঠের শোভা বাড়িয়ে তুলেছে এসব সরিষার ক্ষেত। মাঠের চারিদিক যেন হলুদ হলুদে পরিপূর্ণ। এক দেখাতেই মন কাড়বে দর্শনার্থীদের। সরিষা ফুলের শোভা আরো বাড়িয়ে তুলেছে অসংখ্য মৌমাছির দল গুণগুনিয়ে মধু আহরণে ব্যস্ততা দেখে। হলুদ বর্ণের বর্ণিল জমিগুলোতে আশেপাশে দূর দূরান্ত থেকে স্কুল কলেজের শৌখিন প্রকৃতি প্রেমিকরা বেড়াতে আসছেন। আবার সরিষার ফুলের সৌন্দর্যকে ধরে রাখার জন্য অনেক তরুণ-তরুণীরা ক্যামেরা ও ভিডিও মাধ্যমে নিজের ছবির সঙ্গে সরিষার ফুলের ছবি ধরে রাখছেন।

এ বছর অনেকেই আগাম সরিষা আবাদ করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলন আশা করছেন জেলার কৃষকরা। জেলার সমতল এলাকার বাইরেও পল্লী অঞ্চলে এ বছর সবচেয়ে বেশি সরিষার চাষ করা হয়েছে। তবে চরের বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সরিষার চাষ করে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছে কৃষকরা। বন্যা পরর্বতী সময়ে তাদের মনে এখন নতুন করে আশা জাগিয়েছে সরিষা চাষে।

জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ ও জামালপুর সদরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সরিষার চাষ করা হয়। তবে জামালপুর সদরের লক্ষ্মীরচর, তুলশীরচর, চরযথার্থপুর, নান্দিনা, নরুন্দি, পিয়ারপুর, শরিফপুরসহ কম বেশি সব এলাকাতেই সরিষার আবাদ করা হয়।

কেন্দুয়া কালীবাড়ির চরমৌহুয়াডাঙ্গা গ্রামের চাষি খোকন মিয়া জানান, অন্যান্য গ্রামের চেয়ে তাদের এলাকায় বেশি সরিষার আবাদ করা হয়। নিচু এলাকা হবার ফলে বর্ষার পানি নামতে দেরি হয়। ফলে অন্য ফসলের তুলনায় অল্প সময়ের সরিষাই বেশি আবাদ করা হয়।

মেষ্টার আবুল কালাম জানান, অগ্রিম ইরি-বোরো চাষ করার সুবিধার জন্য অধিকাংশ কৃষক সরিষা চাষ করেন। অল্প সময়ে সরিষা তুলে ধান চাষ করলে ফসল ভালো হয়। তাছাড়া জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।

সরিষাবাড়ির কৃষক বিপ্লব জানান, অন্য ফসলের চেয়ে সরিষার চাষে খরচ কম। যে পরিমাণ খরচ হয় দেখা যায় পুরোটাই লাভ থাকে। কৃষক দাম ভালো পাবার ফলে সরিষা চাষ চাহিদা বেড়েছে।

ইসলামপুরের কৃষক হাসান আলী, আব্দুস সামাদ ও মাজেম আলী জানান, সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। ভালো ফুল ফুটেছে বলে ভালো ফলনও আশা করা যায়।

ইসলামপুর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এবার কৃষকরা সরিষা চাষে তাদের ভাগ্যবদল হবে। সরিষার আবাদ ভালো হওয়াতে তাদের মুখে যেন হাসির ঝিলিক। আবাদে সেচ, সার ও কীটনাশক অনেক কম লাগে। তার মতে, প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবার বাম্পার ফলন হবে।

তিনি আরো বলেন, সরিষা চাষ করে মানুষ শুধু তেলই তৈরি করে না। এই সরিষা ভাঙ্গিয়ে খৈল ও গাছ থেকে ভুষি তৈরি হয়। যা গরুর ভালো খাদ্য এবং ভালো জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

ইসলামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এএলএম রেজুয়ান জানান, চলতি বছর প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্য বছরের চেয়ে এ বছর সরিষা আবাদে আগ্রহী বেশি সংখ্যক কৃষকরা। উপজেলার উচু জমির পাশাপাশি পল্লী অঞ্চলে বন্যার পর মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর ব্যাপক সরিষার উৎপাদন সম্ভব। সরিষা কৃষকের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে ও কোনো রকম রোগ বালাই না ধরলে সরিষা চাষে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আশা করছেন। তবে সরকারের সরিষা প্রণোদনা থাকায় সরিষা আবাদে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে অনেকটাই।

পরিবেশবাদী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, জেলার প্রত্যেকটি উপজেলাতে সরিষা ফুলে ভরে গেছে ফসলের মাঠ। চারদিকে তাকালে যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার। কখনো কখনো সরিষার ক্ষেতে বসছে পোকাখাদক বুলবুলি ও শালিকের ঝাঁক। নানাজাতের পাখপাখালিরা খাদ্য সংগ্রহ করতে ক্ষেত খামারের কীটপতঙ্গ খেয়ে জীবন ধারনের পাশাপাশি ফসলকে রক্ষা করে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে।-ডেইলি-বাংলাদেশ

Advertisement