Homeঅন্যান্যনিজ ঘরের ইট খুলে জনগণের রাস্তা মেরামত করেন তিনি

নিজ ঘরের ইট খুলে জনগণের রাস্তা মেরামত করেন তিনি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মিস্টার আলী। বয়স ৫০। তিনি পেশায় ভ্যানচালক হলেও নেশা তার রাস্তা সংস্কার। এলাকার যেকোনো রাস্তাঘাটে খানাখন্দ বা গর্ত দেখলেই নেমে পড়েন মেরামত করতে। সকালবেলা ভ্যান চালালেও দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত করেন রাস্তা সংস্কারের কাজ।

জানা গেছে, মিস্টার আলীর বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের পোড়াডিহি গ্রামে। ভ্যানচালকের পাশাপাশি তিনি গ্রামীণ সড়ক সেতু, কালভার্ট মেরামত ও সংরক্ষণের আওতায় এলসিএসের (লেবার কনট্রান্টিং সোসাইটি) একটি অস্থায়ী প্রকল্পে সুপারভাইজার হিসেবেও কাজ করেন। তবে ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে ভ্যান চালাতে পারছেন না। তবু থেমে নেই তার রাস্তা মেরামতের কাজ।

স্থানীয়র জানায়, কোনো ভাঙা রাস্তা দেখলেই সংস্কারের কাজে নেমে পড়েন তিনি। রাস্তা মেরামতের জন্য নিজের বাড়ির ইটও খুলে এনেছেন।

মিস্টার আলী বলেন, আমি একজন ভ্যানচালক। রাস্তা ভাঙা থাকলে ভ্যান চালাতে কষ্ট হয়। এছাড়া ভ্যানের অনেক যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়। এটি আমি দেখে সহ্য করতে পারি না। তাই আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করি রাস্তা মেরামতের। আমি এরই মধ্যে শিবগঞ্জের গোপালপুর, পারচৌকা, হঠাৎপাড়া, মনাকষা, বাখোরআলী বাজার, কালিগঞ্জ, কাপরাটোলা, রসুনচক, শ্যামপুর, সাতরশিয়া গ্রামের রাস্তা সংস্কার করেছি।

তিনি আরো বলেন, রাস্তা মেরামত করা আমার নেশা। যেখানেই ভাঙা রাস্তা দেখতেই পাই, সেখানেই মেরামত করি। কারণ রাস্তা খারাপ থাকলে অ্যাক্সিডেন্ট বেশি হয়। আমার ঘর থেকে ইট খুলে নিয়ে সেই ইট দিয়ে রাস্তা মেরামতের কাজ করেছি।

মিস্টার আলীর বড় ছেলের বউ হাসিনা বেগম বলেন, আমার শ্বশুর ১২-১৩ বছর ধরে রাস্তা মেরামতের কাজ করেন। তার থাকার জন্য একটি ঘর ছিল, সেটি ভেঙে সেই ইট নিয়ে রাস্তা মেরামত করেছেন। এমনকি রাস্তা মেরামতের টাকার ব্যবস্থা করার জন্য বাড়ির আঙিনায় থাকা গাছগুলো বিক্রি করে দিয়েছে। ভ্যান চালিয়ে যা ইনকাম করেন সব রাস্তা মেরামতের কাজে লাগান।

মিস্টার আলীর স্ত্রী শাহাজাদি বেগম বলেন, আমার স্বামী একযুগ ধরে রাস্তা মেরামতের কাজ করছেন। বাড়িতে কোনো খরচ দেন না, যা ইনকাম করেন তা রাস্তা মেরামতেই ব্যয় করে। আমাদের এখন থাকার কোনো ঘর নাই। থাকার যে ঘরটি ছিল তা ভেঙে ইট নিয়ে রাস্তা মেরামত করেছেন।

বাইকচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, মিস্টার আলী গরিব মানুষ। তিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক। কিন্তু এ ভ্যান চালিয়ে যে রোজগার হয়, তা দিয়ে তার সংসার চালানোর কথা। কিন্তু তা না করে রোজগারের সব টাকা দিয়ে ইট বালু কিনে রাস্তা মেরামত করছেন। এতে উপকার হচ্ছে পথচারী ও যাত্রীদের।

সমাজসেবক নাহিদুজ্জামান বলেন, মিস্টার আলী ভাঙা ও গর্ত হয়ে যাওয়া রাস্তাগুলো মেরামত করেন। এটি জানার পর আমি তাকে শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মনিরুল ইসলামের কাছে নিয়ে যাই। পরে মেয়র মনিরুল ইসলাম তাকে কিছু টাকা ও ক্রেস্ট উপহার দেন। পরবর্তী সময়ে তিনি এলজিইডি থেকে একটি চাকরিও পান। বর্তমানে তার বসবাসের ঘর নেই। তিনি তার ছেলের গোয়াল ঘরে থাকছেন।

এলজিইডি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাহার আলী বলেন, মিস্টার আলীকে একটি কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি এখনো কাজ করছেন। এছাড়া তিনি যেন ভবিষ্যতে আরো ভালোভাবে চলতে পারেন সে ব্যবস্থাও আমরা করে দেবো।

সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ।

Advertisement