Homeঅন্যান্যদুর্দিনে কাঁসা-পিতল শিল্প

দুর্দিনে কাঁসা-পিতল শিল্প

চার দশক আগে গড়ে ওঠা দেড়শো কারখানা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র চারটিতে। এ শিল্প বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কাঁসারুদের। দিন দিন কাঁচামালের দাম বাড়ার পাশাপাশি প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন আধুনিক পণ্য বাজার দখল করায় ধ্বংসের মুখে শিল্পটি।

প্রাচীনকাল থেকে শরীয়তপুরের কাঁসা-পিতল শিল্পের সুখ্যাতি ছিল দেশজুড়ে। একসময় কাঁসা-পিতলের নিত্যপ্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরিতে দিনরাত ব্যস্ত থাকতেন এখানকার শিল্পীরা। এখানকার তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, কলস, থালা, বাটি, গ্লাস, বালতি, পানদানি বিক্রি হতো রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার হাট-বাজারে।

জেলার সদরের গ্রাম পালং, বাঘিরা, বিলাশখান ও দাসার্তা এলাকায় গড়ে ওঠা অন্তত দুই শতাধিক কারখানায় পাঁচ শতাধিক পরিবার এ পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। বংশ পরম্পরায় চলে আসা একসময়ের এ ঐতিহ্য এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। নানা কারণে কাঁসা-পিতলের শিল্পীদের অনেকেই চলে গেছেন ভারতে। অনেকেই করেছেন পূর্ব পুরুষদের পেশা পরিবর্তন।

বর্তমানে দাসার্তা এলাকার ইদ্রিস চৌকিদার, সেন্টু চৌকিদার, নুরুল হক ও মোক্তার কাজী এ চারটি পরিবার শিল্পটিকে টিকিয়ে রেখেছে। বর্তমানে দাসার্তা এলাকায় এ শিল্পটিকে যে চারজন টিকিয়ে রেখেছেন তাদের মধ্যে একজন ইদ্রিস চৌকিদার। তার বাবা জুলমত চৌকিদার অন্তত শত বছর আগে কারখানাটি গড়ে তোলেন। সেসময় কারখানাটিতে ৩০ জন কারিগর কাজ করতেন। জুলমত চৌকিদারের মৃত্যুর পর তার ছেলে ইদ্রিস চৌকিদার ৩০ বছর ধরে কারখানাটি পরিচালনা করছেন। কাজের চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন মাত্র চারজন কারিগর রয়েছেন এ কারখানায়।

কাঁসা-পিতল শিল্পের এমন দৈন্যদশা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আগের মতো কেউ কাসা পিতলের জিনিস কিনতে চায় না। কাঁসা পিতলের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বেশি দামে কিনতে হয় এবং বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। বাজারে এখন অল্প দামে প্লাস্টিকসহ নানা ধরনের জিনিস পাওয়া যায়। লোকজন তাই বেশি দাম দিয়ে কাঁসা-পিতলের জিনিস কেনে না। তাছাড়া মূলধন কমে যাওয়ায় ব্যবসায় এখন বেশি ইনভেস্ট করতে পারছি না। সরকার থেকে যদি আমাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতো, তাহলে শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাঁসা-পিতল তৈরির কাঁচামাল ভারতে চলে যায়। ভারতে নতুন নতুন প্রযুক্তির মেশিন রয়েছে, সেখানে স্বল্প খরচে জিনিসপত্র বানিয়ে বাংলাদেশে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। সেসব জিনিসের দাম অনেক কম হয়। আমরা সনাতন পদ্ধতিতে কাঁসা-পিতলের জিনিস বানাই। তাই আমাদেরটা বেশি মজবুত হয় কিন্তু খরচ বেশি পড়ে। লোকজন তাই কম দামে ভারতের তৈরি কাঁসা-পিতলের জিনিস কেনে। আমাদের কাঁচামাল যদি ভারতে চলে না যেতো, আমরাও স্বল্পদামে বিক্রি করতে পারতাম।’-মানবকণ্ঠ

Advertisement