Homeঅন্যান্যদিনাজপুরী লিচু এখন বাজারে

দিনাজপুরী লিচু এখন বাজারে

দেশের সেরা অনন্য স্বাদের ও রঙে টসটসে দিনাজপুরী লিচু এখন বাজারে। সবার মন জয় করা দিনাজপুরী লিচু মানেই অন্যরকম মিষ্টি ও রসালো স্বাদ। দিনাজপুরী লিচু গোটা দেশে যার চাহিদা ও বাজার রয়েছে। সারাদেশে কমবেশি লিচু উৎপাদিত হলেও দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা বেশি। তবে এবার জেলায় দাবদাহ বেশি থাকায় লিচু গুটির ক্ষতি হয়েছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে লিচু ফেটেও গেছে। আবার গোড়া শুকিয়ে ঝড়ে পড়েছে। তাই কিছুটা উৎপাদন কম হবে লিচুর। লিচু যেন গাছে নষ্ট না হয়, সেজন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের গাছের গোড়ায় ও লিচুর গাছে বেশি বেশি পানি স্প্রে করার পরামর্শ দেয় কৃষি বিভাগ। যারা মেনে চলেছে, তাদের লিচু ভালো আছে বলে কৃষকরা জানান।

বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিভিন্ন জাতের লিচুর মধ্যে বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি, কাঁঠালি, মোজাফফরপুরী লিচু এখন সবার কাছেই প্রিয়। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে লিচু বাজারে পাওয়া যাবে। এবার রোদের তীব্রতা ও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় অনেক লিচু পাকার রং ধরে এবং এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অপরিপক্ক এসব লিচু বিক্রি করছেন। এর স্বাদ পাওয়া যাবে না। আবার খেলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সময়ের আগেই বাজারে দেখা যায় এসব লিচু। দিন দিন লিচুর বেচা-কেনা বাড়ছে। বাজারে প্রথম আসে মাদ্রাজী লিচু। এরপর কাঁঠালি, মোজাফফরপুরী, বোম্বাই। আর শেষের দিকে বেদানা ও চায়না থ্রি লিচু বাজারে নামবে।

দিনাজপুরের কালিতলা মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে বসছে লিচুর বাজার। ব্যবসায়ীরা জেলার বিভিন্ন বাগান আর বাজার থেকে লিচু কিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন। এখন পরিবহন ছাড়াও কুরিয়ার সার্ভিসেও দেশের বিভিন্ন স্থানে লিচু যাওয়া শুরু হয়েছে। এবার দিনাজপুর জেলায় লিচু উৎপাদন এবং বেচা-কেনা ৭০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবার আশা করছে কৃষি বিভাগ। দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলাতে কম বেশি লিচুর চাষ হয়। বেশি চাষ হয় সদর উপজেলার মাসিমপুর, উলিপুর, আউলিয়াপুর, মহব্বতপুর, বিরলের মাধববাটি, করলা, রবিপুর, রাজারামপুর, মহেশপুর, বটহাট এবং চিরিরবন্দর, বিরল, বীরগঞ্জ ও খানসামা উপজেলায়।

চিরিরবন্দরের লিচু চাষি আফসার আলী বলেন, আগাম জাতের মাদ্রাজী লিচুর ফলন কম হয়েছে ও আকারে ছোট হয়েছে। ঠিকমতো বৃষ্টি না হওয়ায় এমনটা হয়েছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ। তবে বোম্বাই লিচুর ফলন মোটামুটি ভালো। আশা করছি বাজারে লিচুর দাম ভালো পাবো। আগামী সপ্তাহে পুরোদমে লিচু বাজারে পাওয়া যাবে। তবে গতবারের চেয়ে এবার দাম বেশি। এখন পাইকারি বাজারে প্রতি হাজার মাদ্রাজি লিচু বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকায়। অন্যদিকে খুচরা বাজারে প্রতিশত মাদ্রাজি লিচু ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা।

মাসিমপুরের চাষি ও বিক্রেতা মোসাদ্দেক হোসেন জানান, দিনাজপুরের লিচুর দেশব্যাপী কদর রয়েছে। কিন্তু এ লিচু পাকার পর বেশিদিন রাখা যায় না। আবার গাছ থেকে নামানোর পর কয়েকদিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। এতে তাড়াতাড়ি মৌসুম শেষ হয়ে যায়। তাই দীর্ঘদিন লিচু সংরক্ষণে একটি হিমাগার এ অঞ্চলে তৈরি হলে চাষিরা লাভবান হবে এবং সারা বছরই এর স্বাদ নিতে পারবে মানুষ। এ ছাড়াও লিচু রপ্তানি যোগ্য হতে পারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এবার দিনাজপুর জেলায় ৫৭৮৭ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে সাড়ে ৫ হাজার। বসতবাড়ির উঠানসহ বাগানগুলোতে লিচুগাছ রয়েছে ৭ লক্ষাধিক। যা গত বছরের তুলনায় ১০৭ হেক্টর বেশি। জেলায় লিচু বাগান রয়েছে ৫ হাজার ৪১৮টি। এবার দিনাজপুর জেলায় প্রায় ৩২ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

Advertisement