Homeঅন্যান্যটাঙ্গাইলের সুস্বাদু মুখরোচক খাবার ‘ঝাল চাপড়ি’

টাঙ্গাইলের সুস্বাদু মুখরোচক খাবার ‘ঝাল চাপড়ি’

‘ঝাল চাপড়ি’র সুস্বাদু মুখরোচক এ খাবারের গল্পের শুরুটা ২০-২৫ বছর আগে টাঙ্গাইল পৌর শহরের আদালত চত্বর এলাকায়। এখন জেলার ১২ উপজেলা জুড়েই বিস্তৃত। কেউ-কেউ আবার একে ‘ঝাল চাপটি’ বলে থাকেন। এটির কদর বাড়ছে দিন-দিন। দাম কম হওয়ায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছেই এখন পছন্দের তালিকায় থাকছে ‘ঝাল চাপড়ি’।

গল্পের শুরুটা ২০-২৫ বছর আগে টাঙ্গাইল পৌর শহরের ডিস্ট্রিক্ট আদালত চত্বর এলাকায় হলেও এখন জেলার ১২ উপজেলা জুড়েই। বেচা বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়াতে বেড়েছে দোকানের সংখ্যা। আরেক দিকে বেড়েছে তাদের আয় রোজগার। ক্রেতা-বিক্রেতারা মনে করেন, টাঙ্গাইলের চমচমের সুনাম যেমন সারাদেশেই রয়েছে তেমনি এই ঝাল চাপড়িও জায়গা করে নিবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইল পৌর শহরের ডিস্ট্রিক্ট আদালত চত্বর এলাকা। এখানে রয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, জেলা পরিষদ, বিআরটিএ অফিস, পাসপোর্ট অফিস, নির্বাচন অফিস ও কাপড়ের দোকান থাকায় ভোরের আলো ফুটতেই বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে নানা প্রয়োজনে ছুটে আসেন শত-শত মানুষ। আর এসব মানুষের খাবারের চাহিদা মেটাতে আদালত চত্বরে হোটেলগুলোর নানা খাবারের পাশাপাশি রয়েছে এই ঝাল চাপড়ির বিশেষ চাহিদা। তাই ভোরের আলো ফুটার সাথে-সাথে চাপড়ি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বিক্রেতারা।

এই ঝাল চাপড়ি তৈরিতে পানির সাথে আটা, লবণ, কালোজিরা ও হলুদের গুঁড়া দিয়ে প্রথমে ভালো করে মিশানো হয়। তারপর চুলায় বিশাল আকৃতির একটি তাওয়ায় বসিয়ে তার উপর মেশানো আটা লেপে দেয়া হয়। এরপর আস্তে-আস্তে তৈরি হতে থাকে সুস্বাদু ঝাল চাপড়ি। মচমচে হলেই চুলা থেকে নামিয়ে গরম-গরম পরিবেশন করা হয় ক্রেতাদের মাঝে। চাপড়ির সাথে দেয়া হয় কাচামরিচ ভর্তা, পেঁয়াজ ভর্তা, ধনিয়া ভর্তা, আলু ভর্তা ও খাঁটি সরিষার তেল। এই চাপড়ি খেলে ক্ষুধা নিবারণ হয় বলে জানিয়েছেন চাপড়ি প্রেমিরা। যার মূল্য মাত্র ২০ টাকা।

এ চাপড়ির চাহিদা দিন-দিন বৃদ্ধি পাওয়াতে শহরের আদালত চত্বরে ২০-২৫টি দোকান রয়েছে। ক্রেতাও বাড়ছে দিন-দিন। মুবারক মিয়া নামে এক চাপড়ি বিক্রেতা বলেন, প্রতিদিন ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকার চাপড়ি বিক্রি হয়। এতে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা লাভ থাকে। এই চাপড়ির ওজন ১-৩ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, এই চাপড়ি বিক্রি করে ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা খরচ চালিয়েও সংসার ভালোভাবে চালাচ্ছি। এখানে সব ধরনের মানুষ চাপড়ি খেতে আসেন। অল্প টাকায় তাদের ক্ষুধা মেটাতে পারছে।

আরেক বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার বাবা এখানে ব্যবসা করেছেন, আমিও করছি। এই চাপড়ির চাহিদা দিন-দিন বাড়ছে। সব শ্রেণির মানুষ এ চাপড়ি খাচ্ছে। অনেকে খেয়ে পরিবারের জন্য বাসায় নিয়ে যাচ্ছে। এই চাপড়ির সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে এক সময়। চমচমের মতো সুনাম কুড়িয়ে নিবে।

জেলার ধনবাড়ী উপজেলা থেকে পাসপোর্ট তৈরি করতে এসেছেন জব্বার আলী। তিনি বলেন, আমি পাসপোর্ট করতে এসেছিলাম। দুপুর হয়ে গেছে, ক্ষুধাও লেগেছে হোটেলে খেলে ১২০-১৫০ টাকার নিচে খাওয়া যাবে না। পাসপোর্ট অফিসের সাথেই ঝাল চাপড়ি পাওয়া যায়। সবার মুখে-মুখে শুনেছি অনেক সুস্বাদু আজ খেয়ে দেখলাম সত্যি খেয়ে অনেক তৃপ্তি পেলাম। ২০ টাকায়ও খাওয়া হয়ে গেল।

সদর উপজেলার হুগড়া গ্রামের রিকশা চালক আলী আকবর বলেন, সকালে রিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হই। সকাল ও দুপুরে ডিস্ট্রিক্ট আদালত চত্বরে এসে চাপড়ি খাই। আমরা গরীব মানুষ হোটেলে খেলে অনেক টাকা লাগে এতো টাকা কই পাবো। ২০ টাকা দিয়ে চাপড়ি খাই ক্ষুধাও চলে চাই টাকাও বাঁচে।

একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, আমি ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। টাঙ্গাইল আদালত চত্বরে কাজে এসেছি। অনেকের মুখে শুনেছি চাপড়ির কথা অনেক সুস্বাদু। খেয়ে দেখলাম অনেক মজা লেগেছে। ২০ টাকায় দিয়ে দুপুরে খাবার হয়ে গেল।-বাসস

Advertisement