Homeসব খবরজেলার খবরঝুপড়ি ঘরে দিন কাটে ষাটোর্ধ্ব রানুর

ঝুপড়ি ঘরে দিন কাটে ষাটোর্ধ্ব রানুর

সড়কের পাশে কলা গাছের ঝোপের আড়ালে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে কয়েক টুকরা ছেঁড়া কাপড় ও পলিথিনে মোড়ানো ঝুপড়ি ঘরে বসবাস ষাটোর্ধ্ব এক নারীর। সেই ঘরের মেঝেতে প্লাস্টিকের বস্তা বিছিয়ে শোবার জায়গা তার। পাশেই সড়কের ওপর খোলা জায়গায় রয়েছে রান্না করার মাটির চুলা। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে থাকতে হচ্ছে তাকে। যেন দেখার কেউ নেই। সড়কটি দিয়ে গেলে যে কেউ দেখে বলবে আধুনিক যুগে এ কেমন বসবাস। বলছিলাম শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভূমখাড়া ইউনিয়নের পূর্ব নলতা এলাকার রানু বেগমের কথা।

জানা যায়, ৪৫ বছর আগে উপজেলার সাহেবের চর এলাকার হাকিম খানের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। নদীভাঙনের শিকার হয়ে ১০ বছর আগে সব হারিয়ে স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে চলে যান ঢাকার শহর। সেখানে তার ছেলেরা দিনমজুরের কাজ শুরু করেন। তবে সেই সংসারে অভাব-অনটনে বেশি দিন জায়গা হয়নি রানু বেগমের।

৪ বছর আগে ফিরে আসেন বাবার বাড়িতে। ভাইদের অবস্থা তেমন ভালো না হওয়ায় অন্যের বাড়িতে দু’মুঠো খাবারের বিনিময়ে কাজ করতেন রানু। তবে শরীর অসুস্থ হওয়ায় এখন আর কাজে নেয় না কেউ। তাই বাবার বাড়িতে পাওয়া এক খণ্ড জমিতে পলিথিন আর কাপড় দিয়ে মোড়ানো ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে বসবাস তার। ঘরে সঙ্গী হারিকেন, পাতিল, কলস, প্লেট আর কয়েকটি ছেড়া কাঁথা ও কাপড়। রান্নার জন্য কোনো ঘর না থাকায় খোলা আকাশের নিচে সড়কের ওপর চুলা বানিয়ে সেখানেই করেন রান্না। ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে সেই চুলা নষ্ট হওয়ার ভয়ে আগে থেকে তৈরি করে রাখতে হয় আরো কয়েকটি চুলা। এভাবেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন ষাটোর্ধ্ব রানু বেগমের।

অসহায় রানু বেগম জানান, এক সময় স্বামীর সংসারে ঘরবাড়ি নিয়ে খেয়ে দেয়ে সুখেই ছিলেন রানু বেগম। সর্বনাশা নদী ভাঙনে বাড়িঘর, ফসলি জমি বিলিন হলে স্বামী-সন্তান নিয়ে ঢাকাতে পারি জমান। সেখান স্বামী-সন্তানদের আয়ে দু’বেলা খেয়ে বাঁচাই কষ্টের। তাই বাবার পাওয়া এক টুকরো জমিতে পলিথিন ও ছেঁড়া কাপড় দিয়ে একটা ঘর থাকছেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, ঝড় হলে ঘরটি ভেঙে যায়। পরে প্লাস্টিক কুড়িয়ে আবার ঘর তোলে। তার অনেক কষ্ট। প্রধানমন্ত্রী তাকে সহযোগিতা করলে ভালো হতো।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, অতিদ্রুত যেন রানু বেগমকে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হয়। যাতে করে শেষ জীবনটুকু সুখে কাটাতে পারেন রানু বেগম।

নড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. পারভেজ বলেন, রানু বেগমের বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠিয়েছি। দ্রুত তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণের ঘর ও বয়স্ক ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা দিয়ে রানু বেগমকে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ।

Advertisement