Homeঅন্যান্যচট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়কে সূর্যমুখী-গোলাপ, মুগ্ধ যাত্রী সাধারণ

চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়কে সূর্যমুখী-গোলাপ, মুগ্ধ যাত্রী সাধারণ

দেবীর আরাধনায়, ভালোবাসার বন্ধনে, সাফল্যের উৎসবে, জীবনের প্রতিটি শুভ কর্মযজ্ঞে রয়েছে ফুলের বহুবিধ ব্যবহার। ফুল মানুষের মনের ইতিবাচক পরিবর্তনের অন্যতম সহায়ক। তাই যাত্রাপথে ফুলের সৌন্দর্য ও সৌরভে যাত্রীদের মন প্রফুল্ল রাখতে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়কাংশের বিভাজকে করা হয়েছে হরেক রকমের ফুলের চাষ।

চট্টগ্রাম নগরী হতে পর্যটন নগরী রাঙ্গামাটি যাওয়ার পথে যানজট, ধুলোবালি আর মাঝে মাঝে আবর্জনার স্তুপের দুর্গন্ধ মাড়িয়ে হঠাৎ ফুলের সৌন্দর্য আর সৌরভে মুগ্ধ হয়ে যায় যাত্রীসাধারণ। শুধু ফুলের চাষ নয়, করা হয়েছে শীতকালীন শাকসবজি ও আরবীয় খেজুরের চাষ।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা সদর হতে রাউজান উপজেলার গিরিছায়া পর্যন্ত প্রায় ১৮.৩ কিলোমিটার ৪ লেন বিশিষ্ট এই মহাসড়কের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই মহাসড়েকর পশ্চিমে রাউজান উপজেলার প্রবেশ দ্বার ছত্তারঘাট থেকে পূর্বে রাঙ্গামাটি জেলার সীমান্ত গিরিছায়া পর্যন্ত সড়ক বিভাজকে জুড়ে এই চাষাবাদ করা হয়।

এই মহাসড়কটির রাউজান অংশে ধুলোবালিমুক্ত, যানজটমুক্ত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সৌন্দর্যবর্ধনসহ বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসন হতে টানা পঞ্চম বারের মতো নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। তারই অংশ হিসেবে রাউজান পৌরসভার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও পরিচর্যায় এবং উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষ ও পরামর্শে সড়ক বিভাজনে করা হয়েছে ফুল, সবজি আর খেজুরের চাষ।

ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ পথচারী তপন দে দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, হাটহাজারী হয়ে রাউজানে প্রবেশ করে নানান রকম ফুল আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সড়ক দেখে মন ভালো হয়ে যায়।

একইভাবে আরেক পথচারী আনিসুর রহমান বলেন, শহর হতে বাড়ি আসার সময় যখন নাকে ফুলের সুবাস আসে, বুঝতে পারি রাউজান এসে গেছি। এমন ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগের জন্য তারা উভয়ই রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানান।

পৌরসভা মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, রাউজান পৌরসভাকে দেশের মধ্যে একটি মডেল পৌরসভা গঠনের লক্ষ্যে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর পরিকল্পনায় এই ফুলের চাষ, উন্নতজাতের খেজুরের চাষ করা হয়েছে। ভূমিহীন ও বেকারদের সড়ক বিভাজকে সবজি চাষে প্রেষণা দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয় সড়কজুড়ে উন্নত বাতি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পৌরসভার সংগৃহীত আবর্জনা হতে উৎপাদিত সার আমরা ফুল, সবজি ও খেজুর চাষে ব্যবহার করছি। ইতিমধ্যে রাউজান পৌরসভার আবর্জনা সংগ্রহ ও রিসাইকলিং পদ্ধতি সারা দেশে অনুসরণ করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় হতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন।

এই মহাসড়কটির রাউজানের প্রবেশদ্বার ছত্তারঘাট হতে পূর্বে মুন্সিরঘাটা পর্যন্ত বিভাজকে করা হয়েছে নানান জাতের গোলাপ, গাঁদা, সূর্যমুখী, বেলীসহ হরেকরকম ফুলের চাষ। মুন্সিরঘাটা হতে জলিল নগর মডেল জামে মসজিদ পর্যন্ত করা হয়ে উন্নত জাতের আরবীয় খেজুরের চাষ। সেখান হতে রাঙ্গামাটি জেলার সীমানার গিরিছায়া পর্যন্ত স্থানীয় ভূমিহীন লোকজন ও ক্ষুদে দোকানদাররা করেছেন আলু, বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, টমেটো, ধনেপাতা, টকপাতা, হাইব্রিড কাঁচামরিচ, ঢেড়শ, মুলা, পালংশাক, লালশাকসহ নানান জাতের শাকসবজি চাষ।

পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাইন্যা পুকুরপাড় এলাকায় সবজি চাষে পরিচর্যারত অবস্থায় কথা হয় সেলুনের দোকানদার নরসুন্দর কল্যাণ শীল, মিষ্টির দোকানদার অরুণ শীল ও ঔষধের দোকানদার মানবব্রত শর্মার সঙ্গে। তারা বলেন, দোকানদারীর পাশাপাশি আমরা সড়ক বিভাজকে শাকসবজির চাষ করি। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী আমাদের বিনামূল্যে বীজ-সার দিয়েছেন এবং পৌর মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ আমাদের চাষাবাদে নানানভাবে সহযোগিতা করে উৎসাহ দেন। কয়েকমাস যাবৎ বাজার হতে আমাদের শাকসবজি কিনতে হয় না। এখান হতে আমরা পারিবারের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত শাকসবজি বিক্রি করে বাড়তি আয় করি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুম কবির দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস হতে আমরা এই ফুল, সবজি আর খেজুর চাষ সার্বক্ষণিকভাবে দেখভাল করছি। বিভাজকের এই চাষাবাদ দেখে জনসাধারণ উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। কীভাবে বাড়ির আঙ্গিনায় ও পতিত জমিতে চাষাবাদ করা যায় তা জানতে তারা কৃষি কর্মকর্তা ফোন দিচ্ছেন।

শুধু এই মহাসড়কটি নয়, রাউজানের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি স্থাপনাগুলোর আঙ্গিনায়ও শোভা পাচ্ছে গোলাপ, গাঁদা, সূর্যমুখীসহ হরেক রকমের ফুল।

সূত্র: ইত্তেফাক।

Advertisement