Homeঅন্যান্যএবার ৬০০ কোটি টাকা ফুল বিক্রির প্রত্যাশা

এবার ৬০০ কোটি টাকা ফুল বিক্রির প্রত্যাশা

সামনের বছর লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখেন সব চাষী। তবে কোন না কোন বিপর্যয়ে সে স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে রুপ নেয়। কখনো কখনো লাভ হলে তাও খুব সীমিত। করোনা, ঘূর্ণিঝড় আম্পানসহ নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠে এ বছর চলতি শীত মৌসুমে লাভের আশা করছেন দেশের ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালির ফুল চাষীরা।

ফুলচাষীরা বলছেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে চলতি বছর ফুল বিক্রির মৌসুম (ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত) চার মাসে ৬০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে গদখালির ফুল সেক্টর থেকে। অপরদিকে ফুলচাষী এবং বিপণনে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত নভেম্বর মাস এবং চলতি মাস জুড়ে হরতাল অবরোধের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফুল সরবরাহ ও পরিবহনে দ্বিগুন অর্থ গুনতে হয়েছে তাদের।

জানা গেছে, গোটা যশোর জেলার দেড় হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে প্রায় ছয় হাজার কৃষক এ ফুল চাষের সাথে জড়িত। দেশের মোট ফুলের চাহিদার ৭৪ শতাংশ ফুল এই জেলা থেকে সরবরাহ করা হয়। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস থেকে গদখালির ফুলের চাহিদা ও বিক্রি ক্রমাগত বাড়তে থাকে। একইসাথে বাড়তে থাকে ফুলের দামও।

প্রতি বছর ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস, ক্রিসমাস, ইংরেজি নববর্ষ, ১৪ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১শে ফেব্রুয়ারী শহীদ দিবস ও ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অনুষ্ঠানকে টার্গের করে মোটা অংকের ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে গদখালির ফুল চাষীরা। আসন্ন ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে ঘিরে এই ফুল সেক্টর থেকে ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ কোটি টাকা।

সরেজমিনে গত মঙ্গলবার গদখালি ফুলের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ বাজারে গোলাপ বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৪-৫ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা প্রতি পিস ৩-৪ টাকা, গাদা ফুল প্রতি হাজার ৪০০-৫০০ টাকা, রজনীগন্ধা প্রতি পিস ৩-৪ টাকা, ঝাউ প্রতি পিস মানভেদে ৫০-১০০ টাকা, জারবেরা প্রতি পিস ১০-১২ টাকা। ভালো দামে ফুল বিক্রি করে সন্তুষ্ট চাষী ও ব্যবসায়ীরা। গদখালি থেকে পানিসারা ফুল মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন বাগান, ফুলের সেড ঘুরে দেখা যায়, আসন্ন দিবসগুলোকে উদ্দেশ্য করে ফুলের বাজার ধরতে বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষী এবং বাগানের কর্মচারীরা।

পানিসারা এলাকার ফুলচাষী ইসমাইল হোসেন বলেন, এ বছর চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ আর গাদা ফুল চাষ করেছি। চাষের পরিমাণ কম হলেও এ বছর চাষীরা মোটামুটি ভালো দাম পাচ্ছে। তবে হরতাল অবরোধে দ্বিগুন গাড়িভাড়া দিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় ফুল সরবরাহ করতে হচ্ছে।

ফুল পরিচর্যার কাজ করছিলেন ফুলচাষী সাইফুল ইসলাম। তিনি এ বছর ১ বিঘা জমিতে জারবেরা, রজনীগন্ধার চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এ বছর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আমাদের ফুল চাষীদের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে। আমরা বর্তমানে ভালো দাম পেলেও শঙ্কায় ভুগছি। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকলে অনুষ্ঠান বা দিবসগুলোর সুন্দরভাবে উদযাপিত হয় না তখন ক্রেতা পর্যায়ে আমাদের ফুলের চাহিদা ও বিক্রি কমে যায়।

তিনি বলেন, প্রতি বছর নানা কারণে চাষীরা দাম পায় না। এজন্য চলতি বছর সব চাষী স্বল্প পরিমাণে ফুলের চাষ করেছে। বাজার ধরার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি আশা করি দিবসগুলোতে ফুলের দাম আরও বাড়বে।

এক বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আজকের বাজারে গোলাপ প্রতি পিস ৪-৫ টাকায় বিক্রি করেছি। ১৬ই ডিসেম্বরের আগে দাম আরও বাড়বে। এজন্য এখন গাছের যত্নের দিকে সবাই খেয়াল করছে।

Advertisement