Homeসব খবরজেলার খবরইউটিউব দেখে স্ট্রবেরী চাষ, তিন মাসে আয় ৬ লাখ...

ইউটিউব দেখে স্ট্রবেরী চাষ, তিন মাসে আয় ৬ লাখ টাকা

লাালমনিরহাটে এক বেকার যুবক ইউটিউব থেকে উৎসাহী হয়ে বিদেশি রসালো ও সুঘ্রানযুক্ত স্ট্রবেরী চাষ করে তিন মাসে ৬ লাক্ষ আয়ের ধারনা করছে তরুণ এক কৃষি উদ্যোক্তা। লেখাপড়া শেষে সরকারি চাকুরির জন্য ঘুরেছেন দ্বারে দ্বারে। সেই চাকুরির বাজার মন্দা হওয়ায় নতুন কিছু করার লক্ষে ইউটিউব দেখে উদ্যোগী হয়ে স্ট্রবেরি চাষে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের মনোরম গ্রামের জাহিদ হাসান বসুনিয়া,ভাগ্যের মোড় ঘোরাতে তিন বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেছেন তিনি। প্রথমবার হলেও দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন প্রত্যন্ত গ্রামের তরুণ এই কৃষি উদ্যোক্তা। এতে জীবনের ভাগ্য বদলানোর স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

জাহিদ বসুনিয়া জানান, ২০১৮ সালে স্নাতকোত্তর পাশ করে সরকারি চাকুরির জন্য তিন বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। এরপর নিজেই কিছু করার জন্য উদ্যোগী হন। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া এক একর জমিতে প্রথম আলুর আবাদ শুরু করেন। তেমন লাভ না হওয়ায়, সবসময় ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছে ছিল জাহিদের। ইউটিউব দেখে মনস্থির করেন স্ট্রবেরি চাষের সেই ইচ্ছে থেকে স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হন। ইউটিউব, গোগলে খুঁজতে থাকেন চাষের পদ্ধতি। এরই ধারাবাহিকতায় বগুড়ার স্ট্রবেরি চাষী হাসানের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে জমি প্রস্তুত করেন তিনি। কিন্তু উচ্চ মূল্যের ফল হওয়ায় পুঁজির অভাবে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করতে বিপাকে পড়তে হয় তাঁকে। বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়ে ঋণের জন্য আবেদন করেন। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সবাই ঝুঁকিপূর্ণ আবাদ হওয়ায় উপযুক্ত জামানত থাকাতেও ঋণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তিনটি আলাদা এনজিওর কাছ থেকে চার লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে সেই সাথে নিজের জমানো দুই লক্ষ টাকা দিয়ে গত বছর ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখ প্রথমবারের মত সেই আলুর জমিতে রোপণ করেন ১৮ হাজার স্ট্রবেরির চারা।

তবে অভিজ্ঞতা না থাকায় অর্ধেকেরও বেশি চারা তাঁর মরে যায়। হতাশ না হয়ে অবশিষ্ট প্রায় আট হাজার চারাগাছের যত্ন করতে শুরু করেন। তাঁর এ কাজে সহায়তার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োগ করেন চারজন অভিজ্ঞ কৃষক শ্রমিক। শ্রমিকদের পরিচর্যা আর নিজের প্রচেষ্টায় অবশেষে আড়াই মাসেই ফসল তোলা শুরু করেন ক্ষেত থেকে স্ট্রবেরি তোলা। ফেব্রুয়ারীর ২০ তারিখে প্রথম ফল তোলেন জাহিদ এবং এই অল্প কয়েকদিনে ইতিমধ্যে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় হয়েছে তাঁর। আশা করছেন আগামী এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফলন তুলতে পারবেন। তাতে অন্তত খরচ বাদে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।

জাহিদ হাসানের স্ট্রবেরি বাগানের কৃষি শ্রমিক সন্তোষ রায় বলেন, শুরু থেকে আমরা তিনজন কাজ করছি। প্রথমদিকে কঠিন মনে হলেও এখন স্ট্রবেরি চাষের নিয়মকানুন বুঝে গেছি। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আগাছা নিড়ানো, গাছ, পাতা, ফুল, ফলকে নজরে রাখা, কীটনাশক স্প্রে করা, পাকা স্ট্রবেরি তোলা এসব কাজ করি।

আরেক শ্রমিক বিষ্ণু রায় বলেন, জাহিদ ভাইয়ের কারনে আমাদেরও কাজের ব্যবস্থা হয়েছে। তাঁর আবাদ বাড়লে আরও মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

জাহিদের স্ট্রবেরি বাগান দেখতে প্রতিবেশীরা ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিনই আসেন অনেকে। তাঁর এই উদ্যোগ দেখে অনেকেই আগ্রহী হয়েছেন স্ট্রবেরি চাষে। প্রতিবেশী হারুন অর রশিদ বলেন, স্ট্রবেরি দামী ফল। তাঁর লাভ দেখে আগামীতে আমারও এক বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করার ইচ্ছে আছে।

জাহিদ হাসান বলেন, যারা শিক্ষিত বেকার যুবক আছে, তাঁরা শুধু চাকুরির পেছনে না ছুটে যদি নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে কিছু করেন তাহলে দেশের বেকার সমস্যার সমাধান সম্ভব। আধুনিক কৃষির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া এখন সহজ।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শিফাত জাহান বলেন, লালমনিরহাটের মাটি ও আবহাওয়া স্ট্রবেরি চাষের জন্য বেশ উপযোগী স্ট্রবেরি একটি লাভজনক ফসল। আমরা এই তরুণ উদ্যোক্তাকে প্রথম থেকেই বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছি এবং এই চাষে আরো যারা উদ্বুদ্ধ হবে তাদেরকেও আমরা সহযোগিতা করে যাব।-সময়ের কণ্ঠস্বর।

Advertisement