Homeসব খবরজেলার খবরআমের মুকুল পরিচর্চা শুরু করেছেন বাগান মালিকরা

আমের মুকুল পরিচর্চা শুরু করেছেন বাগান মালিকরা

উত্তরের জেলা নওগাঁয় ধানের পর এবার আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এ জেলার আম বিদেশেও বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। তবে জেলায় আমের হিমাগার না থাকায় প্রতি বছর প্রায় কয়েকশ কোটি টাকার আম নষ্ট হচ্ছে। হিমাগারসহ ফুড প্রসেসিং কোম্পানি গড়ে তোলা হলে অর্থনেতিকভাবে এ জেলা আরো এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থান। বর্তমানে গাছে গাছে আমের মুকুল আসায় পরিচর্চা শুরু করেছেন বাগান মালিকরা।

বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্মীতলা উপজেলার আংশিক এলাকা। এসব উপজেলায় প্রধান অর্থকরী ফসল ছিলো আমন ধান ও গম। পানি স্বল্পতার কারণে এক সময় এসব এলাকায় বৃষ্টি নির্ভর একটিমাত্র ফসল আমন ধানের ওপর নির্ভর করতে হতো। তবে গত একযুগের ব্যবধানে বরেন্দ্রের মাঠগুলো এখন সবুজে ছেয়ে গেছে। ধানের আবাদ ছেড়ে চাষিরা এখন আম চাষে ঝুঁকছেন। আম চাষ শুরুর পর তাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আম চাষ লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলে প্রতি বছরই বাড়ছে বাগানের পরিমাণ।

বরেন্দ্র এলাকা হওয়ায় এখানকার আম সুস্বাদু ও সুমিষ্ট। জেলায় আম্রপালি, গোপালভোগ, ফজলি, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, হিমসাগর, হাঁড়িভাঙা, আশ্বিনা, বারী-৪ ও গুটি জাতের আম উৎপাদিত হচ্ছে। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় জেলায় ৬০ শতাংশ বাগানই আম্রপালি। এ জেলার আম ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে এ জেলার আম বিদেশেও বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। তবে আমের হিমাগার না থাকায় প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার আম নষ্ট হয়। হিমাগার গড়ে উঠলে অর্থনেতিক দিক দিয়ে এ জেলা আরো এগিয়ে যাবে। এজন্য সরকারি সহযোগীতা কামনা করেন আমচাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে প্রতি বছর বাড়ছে আম বাগানের পরিমাণ। ২০২৪ সালে ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম বাগান গড়ে উঠেছে। যা গত বছরের তুলনায় ৩০০ হেক্টর বেশি। ২০২২ সালে ছিল ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর। ২০২১ সালে ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর। ২০২০ সালে ২৪ হাজার ৭৭৫ হেক্টর। ২০১৯ সালে ১৮ হাজার ৫২৭ হেক্টর। ২০১৮ সালে ১৬ হাজার হেক্টর। ২০১৭ সালে ১৪ হাজার ৬৭০ হেক্টের।

২০২১ সালে এ জেলার আম্রপালি আমের মধ্যদিয়ে রফতানি শুরু হয়। ২০২৩ সালে ৭জন চাষির মাধ্যমে ২২১ টন আম্রপালি ও বেনানা ম্যাংগো আম ইতালি, কাতার, সুইজারল্যান্ড, লন্ডন ও কাতারসহ কয়েকটি দেশে রফতানি হয়। ২০২২ সালে ৭৮ মেট্রিক টন রফতানি হয়েছে। যদি আম রফতানি পদ্ধতি সহজলভ্য করা যায় তাহলে এ জেলা থেকে আরো বেশি পরিমাণ আম রফতানি সম্ভব বলে মনে করছেন চাষিরা। জেলায় বছরে আমের বাণিজ্য প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

জেলায় মালিক ও শ্রমিক মিলে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার জন। তবে আম সংগ্রহের মৌসুমে এর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন হয়ে যায়।

সাপাহার উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের আম চাষি নুরুজ্জামান বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে আম চাষে সার, কীটনাশক, পানি ও শ্রমিক মিলিয়ে প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। যা থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় সম্ভব। তবে যারা জমি ইজারা নিয়ে আম চাষ করেন তাদের আরো প্রায় ২৫ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়। আম চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়াছে বাগানের পরিমাণ।

বরেন্দ্র এগ্রো পার্কের স্বত্বাধিকারী সোহেল রানা বলেন, প্রতি বছর ঝড়-বৃষ্টি ও পাকা আম নষ্ট হয়। এ আমকে আমরা কোনো কাজে লাগাতে পারি না। যার পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ। যার বাজারমুল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। আম সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বছরে এ ক্ষতি হচ্ছে। যদি সংরক্ষণ ও ফুড প্রসেসিং করা যায় বছরে হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন সম্ভব। তবে আমরা ছোট উদ্যোক্তারা এ বছর স্বল্প পরিসরে আম প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম শুরু করার একটি উদ্যোগ গ্রহণ করবো।

আম চাষি প্রদীপ কুমার বলেন, যাদের জমি আছে তারা বছর চুক্তি হিসেবে ইজারা দিয়েছেন। সেখানে আম বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। এতে বরেন্দ্র ভূমি এখন সবুজে পরিণত হয়েছে। বছর বছর বাড়ছে আম বাগানের পরিমাণ। এতে করে জমির মালিক, চাষি ও শ্রমিক সবাই লাভবান হচ্ছে।

সাপাহার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান হোসেন বলেন, এ উপজেলা খরাপ্রবণ। বৃষ্টি নির্ভর একমাত্র ফসল আমন ধানের আবাদ হতো। পরবর্তীতে বরেন্দ্র অফিস থেকে কিছু এলাকায় সেচপাম্প স্থাপন করা হলে ধানের আবাদ পড়ে। তবে এক যুগের ব্যবধানে মাঠের পর মাঠ এখন আম বাগানে সবুজে-শ্যামলে ছেয়ে গেছে। আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। তবে আম সংরক্ষণের জন্য বেশি কিছু উদ্যোগ নেয়া হলে এ জেলা আরো এগিয়ে যাবে। এ উপজেলায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যদি দ্রুত এর কার্যক্রম শুরু করা হয় এ জেলা অর্থনীতিতে আরো এগিয়ে যাবে।

নওগাঁ চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির পরিচালক অমিয় কুমার দাস বলেন, জেলা আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। তবে আম সংরক্ষণাগার বিশেষ করে হিমাগার ও ফুড প্রসেসিং করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বহুজাতিক কোম্পানির মাধ্যমে এসব তৈরি করা সম্ভব। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে। এছাড়া আম রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার মজুত হওয়ার পাশাপাশি দেশ অর্থনৈতিক দিকে আরো এগিয়ে যাবে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ বছর জেলায় আম বাগানের পরিমাণ ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর। যা থেকে প্রায় ৪ লাখ ৩১ হাজার টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে আম বাগান। স্বাদ ও দাম ভালো পাওয়ায় আম্রপালি, বারি ও ব্যানানা জাতের বাগানের পরিমাণ বাড়ছে। রফতানি পরিসর বাড়াতে উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে আমের ফুড প্রসেসিং প্রক্রিয়াজাত করতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ।

Advertisement