Homeসব খবরআন্তর্জাতিক‘ঘরের সব কাজ করতে পারি, সরকারি চাকরিওয়ালা বউ লাগবে’

‘ঘরের সব কাজ করতে পারি, সরকারি চাকরিওয়ালা বউ লাগবে’

মেয়েকে সুপাত্রের হাতে সমর্পণ করতে চান সমস্ত বাবা-মা। কিন্তু, জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চান সরকারি কর্মীকে? এক যুবকের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে পড়ে গিয়েছে হইচই। ঠিক কী পোস্ট করেছেন তিনি?

সরকারি চাকরিরতা পাত্রী খুঁজছেন গৃহকর্মে নিপুণ এক পাত্র। তিনি নিজেও কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি করেন। কিন্তু কেউ পাত্রী হিসাবে এগিয়ে এলে চাকরিটি ছেড়ে, খেলাধূলায় নিজের স্বপ্ন নিয়ে এগোবেন। এবং সংসার সামলাবেন। রাজি আছেন? সামাজিক মাধ্যমে এমনই বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পোস্ট করেছেন বছর ৩৪-এর জয়রূপ মল্লিক। নিজের ছবির সঙ্গে দু’টি বাক্য – ‘ঘরের সব কাজ করতে পারি। একটা সরকারি চাকরিওয়ালা বউ লাগবে।’

কমেন্টের প্লাবন বয়েছে এই পোস্টে। কেউ পক্ষে, কেউ বা রসিকতার ছলে লিখেছেন – বিরিয়ানি বানাতে জানেন? কৌস্তুভ দেবনাথ নামে এক ইউজ়ার আবার জয়রূপের মন্তব্যকে ‘নির্লজ্জ’ বলে চিহ্নিত করেছেন। কেন? কৌস্তুভের ব্যাখ্যা- মেয়েরা ঘরে থাকে, কাজ করে, বাচ্চা বড় করে। এর অন্যথা হওয়ার কী হয়েছে? আর এক ইউজ়ার সায়নী ঘোষাল অবশ্য বলেন, ‘কে কাকে কী ভাবে বেছে নেবেন, সেটা তাঁর ব্যাপার। এ নিয়ে ছেলে-মেয়ের মধ্যে বিভাজনের কারণ দেখি না।’

আদতে শিবপুরের বাসিন্দা জয়রূপ কর্মসূত্রে এখন থাকেন মহারাষ্ট্রের কল্যাণে। তিনি বলছেন, ‘আমি কিন্তু নিছক মজা করে পোস্টটি দিইনি। কন্ট্র্যাক্ট ব্রিজ নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চাই। সেটাই আমার স্বপ্নের কেরিয়ার। তাই সমমনস্ক কেউ যদি আমাকে এই পথে এগোতে আমার পাশে থাকেন, তাঁকে খুঁজছি।’

সমালোচনা হোক না-হোক, এই বিষয়টি অনেকের কাছেই অভিনব ঠেকেছে। প্রশ্ন উঠেছে, বিবাহ অভিযানে অভিযাত্রীদের ভূমিকা কি বদলাচ্ছে? রমণীর দোষ-গুণের পিতৃতান্ত্রিকতা থেকে বেরোতে পারবে সংসার? নাকি জয়রূপ ব্যতিক্রমই? বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে কর্মক্ষেত্রে পাঠালেও বেশিরভাগ পুরুষ আদতে সত্যজিতের ‘মহানগর’-এর সুব্রত হয়েই থেকে যান? তা ছাড়া, মহিলাদের সামাজিক বৈষম্য দূর হবে কোন পথে? যে প্রশ্নটা তুলছেন চলচ্চিত্র পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়।

তাঁর কথায়, ‘হাউজ হাজব্যান্ড বিষয়টা অভিনব নয়। তবে এ ভাবে নিজেকে তুলে ধরাটা অবশ্যই নতুন। এই ভাবনার বিরোধিতার কোনও কারণ নেই। কিন্তু এতে মূল সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ পুরুষশাসিত সমাজে মেয়েদের কাজের পরিধি অনেকটা কম, সুযোগ-সুবিধা সীমিত। তাই সামাজিক এই লড়াই যতক্ষণ না শেষ হচ্ছে, পুরুষতান্ত্রিকতায় যতক্ষণ না ইতি পড়ছে, ততক্ষণ বৈষম্যজনিত মূল সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয় না।’

আরও একটা বিষয় উঠে আসছে। তা হলো, জয়রূপের মতো পদক্ষেপে ক’জন রাজি? সাহিত্যিক সুবোধ সরকার বলছেন, ‘রবীন্দ্রনাথের অনুবাদক উইলিয়াম রাদিচে লন্ডনে বসে বলেছিলেন, বাড়িতে আমি বৌ-এর কাজ করি। আর আমার বৌ বাইরে গিয়ে কাজ করে। আমার খুব ভালো লাগবে যদি এমন রাদিচে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েন। কিন্তু সেটা কি হচ্ছে?’

পুরুষ অধিকার কর্মী নন্দিনী ভট্টাচার্য বিষয়টিকে স্বাগত জানাচ্ছেন। এতে মহিলাদের প্রকৃত ক্ষমতায়ন হবে বলেই তাঁর মত। অন্তত শুরুটা তো হবে। অথচ নারী আন্দোলন কর্মী শাশ্বতী ঘোষের মতে, ‘এই প্রস্তাবে কাজের বিনিময়ে খাওয়া-পরা, নিরাপত্তার অন্তর্নিহিত বিনিময়কেই স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। অথচ এরই বিরুদ্ধে বহু সংগঠনের লড়াই।’

এ কথাটা ঠিকই যে হাউজ হাজব্যান্ড বিষয়টা একেবারেই অভিনব, তা নয়। এবং যিনি বাড়িতে থাকেন, অনেক ক্ষেত্রেই কাজকর্ম সামাল দেওয়ার ভার পড়ে তাঁর উপরে। স্ত্রীর চাকরির জন্য নিজের কাজ ছেড়ে আমেরিকা পাড়ি দেওয়া বা নিজের গবেষণার ছুটিতে বাড়ির ভার পুরোদস্তুর সামলেছেন, এমন বহু নিদর্শন আশপাশে রয়েছে। তরুণ চলচ্চিত্র পরিচালক সোহিনী দাশগুপ্ত জানান, এক দম্পতির কথা তিনি শুনেছিলেন, যাঁদের ভূমিকাগুলো এমন। স্ত্রী, সন্তান ও পরিচিত সকলে একে খুব স্বাভাবিক ও সদর্থক ভাবেই নিয়েছিলেন।

রাজনীতি, শিল্পের মতো কিছু পেশায় বিষয়টা খুব স্বাভাবিকও। তাঁর কথায়, ‘ব্যক্তিগত ভাবে আমার যদিও মনে হয়, সকলেরই নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত। সেটা তাঁর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য। কিন্তু তা বাদে কেউ যদি একে পছন্দ হিসাবে দেখেন, সেখানে জাজমেন্টাল হওয়ার জায়গা নেই।’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল কাফি আবার অন্য একটি দিকে ইঙ্গিত করছেন। তাঁর কথায়, ‘এ ক্ষেত্রে কেউ আগ্রহী হয়ে এলেও তিনি কী ভাবে প্রস্তাবটাকে পড়ছেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। দু’তরফের চাহিদা অনুযায়ী ঠিক ঠিক রেসপন্স এলে সমস্যা নেই। কিন্তু বিষয়টা এত সহজ নয়। এমন ভাবে সঙ্গী খোঁজা একটা নতুন ও ইন্টারেস্টিং বিকল্প হতে পারে। তবে চিরন্তন প্রেমের বিকল্প নয়।’ নারী-পুরুষের সম্পর্কের যে চিরন্তন ভিত্তি- সেই পারস্পরিক বোঝাপড়ার বিষয়টি এমন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে হয়তো অন্য খাতে এগোবে। কে বলতে পারে?

সূত্র: এইসময়।

Advertisement