Homeঅন্যান্যশিক্ষার্থীদের শাসনের দায়িত্ব শিক্ষকদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে

শিক্ষার্থীদের শাসনের দায়িত্ব শিক্ষকদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে

বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিশোর ও তরুণ যারা ইতিমধ্যেই সারা দেশে ‘কিশোর গ্যাং’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এবং তারা শুধু পাড়ায় মহল্লাতেই অপরাধ সংঘটিত করছে না, বরং নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তাদের এই অস্বাভাবিক আচরণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শ্রেণিকক্ষের পাঠদানের পরিবেশকেও মারাত্মকভাবে বিনষ্ট করছে। এই বখাটে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে চরম বেয়াদবি ও অস্বাভাবিক আচরণ করছে। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ম-শৃঙ্খলা, শিক্ষকদের আদেশ-নির্দেশ কিছুই মানতে চাইছে না।

বিস্ময়কর বিষয় হলো, শুধু ছেলে শিক্ষার্থীই নয়, বরং অনেক মেয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যেও বেপরোয়া আচরণ লক্ষ করা যাচ্ছে। এই অবস্থায় বেশির ভাগ শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে যথাযথভাবে পাঠদান করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষকরা এই বখাটে শিক্ষার্থীদের ভয়ও পাচ্ছেন, কারণ অনেক সময় শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক অভিযোগ উত্থাপন করে নানা ধরনের অনাকা’ঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টিও করছে।

দেশ ও জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থায় এমন অস্বাভাবিক, অরাজক ও অসহনীয় অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। যে কোনো উপায়ে এখানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। ২০১০ সালে সরকার এক পরিপত্র জারির মাধ্যমে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারী’রিক ও মান’সিক শাস্তি সম্পূর্ণ নিষি’দ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের ইতিবাচক প্রভাবের চেয়ে নেতিবাচক প্রভাবই বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির প্রধান কারণ বলেই অনেকে মনে করছেন।

শাসন করার অধিকার না থাকায় অত্যন্ত অসহায়ভাবেই শিক্ষার্থীদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও বেয়াদবি শিক্ষকরা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার এক শ্রেণির শিক্ষকের অতিমাত্রায় প্রাইভেট ও কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত হওয়ায় তাঁদের কাছ থেকেও প্রশ্রয় পেয়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেপরোয়া আচরণ করছে। পরিবারেও ছেলেমেয়েরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে অনেক মা-বাবাই অভিযোগ করছেন। অর্থাত্ শুধু শিক্ষকরাই নন বরং অনেকক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের বেপরোয়া আচরণের জন্য মা-বাবাও অসহায় অবস্থার পড়েছেন।

কাজেই আমাদের ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে প্রথমেই পারিবারিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের শাসনের ভার শিক্ষকদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। বিদেশে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সবকিছুই এখনই আমাদের দেশে চালু করা সম্ভব নয়। তবে শাসন যাতে নির্যাতনে পরিণত না হয়, সে ব্যাপারেও শিক্ষকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। বাড়তি আয়ের জন্য শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করা যাবে না, তবে শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানো বিষয়ে একটি নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।

এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে কোনো শিক্ষক প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না, আর এই নিয়মটি সকল শিক্ষককের জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে। তাহলে প্রাইভেট ও কোচিংয়ের অনৈতিক ও নেতিবাচক প্রভাব থেকে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা অনেকাংশেই মুক্তি পাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সমন্বয়ে ‘শৃঙ্খলা কমিটি’ গঠন করা জরুরি। লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ ধারার বিনোদনে আগ্রহ বাড়াতে সপ্তাহে অন্তত একদিন লেখাপড়ার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা, নাচ-গান, আবৃত্তি, নাটক ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। না হলে শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন, নতুন নতুন সিলেবাস, পাঠ্যসূচি, পরীক্ষা পদ্ধতি ইত্যাদি চালু করলেও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়।

Advertisement