Homeসব খবরজাতীয়রোজিনাকে সচিবালয়ে নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশিত

রোজিনাকে সচিবালয়ে নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশিত

সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কক্ষে দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকে রেখে নির্যাতনের বেশ কয়েকটি ভিডিও এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সমালোচিত হয়েছে। অনেকেই ভিডিওগুলো শেয়ার করে অভিযুক্তদের যথাযথ শাস্তি দাবি করেছেন। অনেকে আবার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের দাবি করেছেন।

বুধবার এমনই আরও একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সাত মিনিটের ওই ভিডিওর শুরুতেই দেখা যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস সরকারী মাকসুদা সুলতানা পলি সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গলা চেপে ধরেছেন। তিনি কেন গলা চেপে ধরছেন রোজিনা জানতে চাইলে পলি বলেন, ‘আপনি সচিব স্যারকে ফোন দেন।’ এর জবাবে রোজিনা বলেন, ‘আমার ফোন ফেরত দেন’।

এসময় মাকসুদা সুলতানা পলি ফোন ফেরত দিতে চাইলেও বাদ সাধেন পাশে উপস্থিত এক নারী পুলিশ সদস্য। তিনি বলেন, ‘না- ফোন দেওয়া যাবে না।’ রোজিনা বলেন, ‘সচিব মহোদয় আমাকে চেনেন। আমি শুনতে চাই তিনি আমার বিষয়ে কি বলেন। তার সাথে বিভিন্ন সংবাদের বিষয়ে আমার কথা হয়েছে।’

এর জবাবে ওই নারী পুলিশ সদস্য বলেন, ‘তাকে সচিব স্যারের কাছে নেওয়া যাবে না। সে ওখানে গিয়ে সিন ক্রিয়েট করবে, একটা অসুস্থ মহিলা।’ মাকসুদা সুলতানা পলি রোজিনাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কী করেন? এখানে ঢুকলেন কিভাবে?’ জবাবে রোজিনা বলেন, ‘আমি প্রথম আলোতে কাজ করি।’ এরপর পলি রোজিনাকে প্রথম আলোর সম্পাদককে ফোন করতে বলেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলোর সম্পাদক সচিব স্যারকে ফোন দেবে।’

কথোপকথনের সময় একাধিকবার নির্যাতনকারী মাকসুদা সুলতানাকে রোজিনার ছবি তুলতে দেখা যায়। ছবি কেন তোলা হচ্ছে কয়েকবার রোজিনার এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো উত্তর দেননি তিনি। এ সময় কোনো এক কর্মকর্তা উপস্থিত হলে ঘটনাস্থলে থাকা একজন পুলিশ তাকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, এই নারী কিছু কাগজ চুরি করেছেন এবং ছবি তুলেছেন। তার এগুলো এডিশনাল সেক্রেটারি স্যার ধরেছেন।

পরে ওই লোকের প্রশ্নের জবাবে রোজিনা বলেন, ‘আমি স্বাস্থ্য বিট কভার করি। প্রথমে আসছি টিকা দিতে। পরে এখানে এসেছি। আমার একটা সোর্স আছে, সে কিছু কাগজ দিয়েছে আমাকে। আমি চলে যাচ্ছিলাম। এসময় আমি পুলিশকে জিজ্ঞেস করেছি পিএস কী আছে? বলে নাই। আমি বললাম, তাহলে কি ভেতরে ঢোকা ঠিক হবে? সে বলল আপনি ভেতরে গিয়ে বসেন, অসুবিধা নাই।’

এ সময় ওই মহিলা পুলিশ সদস্য বলেন, ‘পিআইডি কার্ড নিয়ে সে ঢুকছে। এই কার্ড আটকানোর সাধ্য কারও নেই। ২০০ টাকা দিলে এই কার্ড নীলক্ষেত থেকেও পাওয়া যায়। এই কার্ডের সত্য-মিথ্যা আমরা যাচাই করতে পারি না।’ রোজিনা ইসলাম বলেন, ‘আমাকে এই এডিসি ছাড়া সব এডিসি চেনেন। আমি কখনো কারও কোনো ডকুমেন্ট ধরেছি কেউ বলতে পারবে না।’

এসময় নির্যাতন থেকে ছাড়া পেতে পুলিশ সদস্যের প্রস্তাব মেনে নিয়ে মুচলেকা দিতেও সম্মতি দেন রোজিনা ইসলাম। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। চলে নির্যাতন। রোজিনা ইসলামকে প্রায় ৬ ঘণ্টা আটকে রাখা হয় ওই কক্ষে। এ সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনাকে শাহবাগ থানা পুলিশে হস্তান্তর করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

ওইদিন রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ জানান, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পরে মঙ্গলবার (১৮ মে) তাকে কারাগারে পাঠান আদালত। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। পাশাপাশি বিভিন্ন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক সংগঠন এবং বেসরকারি সংগঠনও বিবৃতি দিয়েছে।-একাত্তর।

ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন:

Advertisement