Homeসব খবরজেলার খবরমালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর যাচ্ছে তিস্তার চরের মিষ্টি কুমড়া!

মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর যাচ্ছে তিস্তার চরের মিষ্টি কুমড়া!

বিস্তীর্ণ চরের চাষিদের কাছ থেকে ভালো দামে কিনে তা বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। এতে তিস্তা চরের চাষিরা তাদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমে উৎপাদন করা মিষ্টি কুমড়া ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পেরে খুশি। তিস্তার চরাঞ্চলে চাষ করা হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে রপ্তানি করা হচ্ছে।

প্রায় ৬ বছর পর গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী চাষিদের উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে রপ্তানি করা হচ্ছে। আগে ২০১৬ সালে বেসরকারি উন্নয়নমূলক সংস্থা প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন বাংলাদেশের উদ্যোগে চরে চাষ করা মিষ্টি কুমড়া বিদেশে রপ্তানি করেছিল। চলতি বছর কৃষি বিভাগের দিকনির্দেশনা ও এমফোরসি প্রকল্পের সহায়তায় রংপুর এগ্রোসহ দুটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কৃষকদের ক্ষেত থেকে সরাসরি মিষ্টি কুমড়া কিনে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে পাঠাচ্ছেন। আর তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া স্থানীয় বাজারসহ বিশ্ব বাজারেও যাওয়ায় তারা খুব খুশি। চরের কৃষকরা নদী ভাঙন, বন্যা ও নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলা করে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন।

বিস্তীর্ণ বালুচরে সবুজের সমারহ। চরের জমিতে কৃষকরা মিষ্টি কুমড়া, আলু, ভুট্টা, বাদাম, পেঁয়াজ, ধান চাষাবাদ করছেন। পাশাপাশি তাদের রয়েছে গবাদি পশু ও ছাগল পালন। কৃষকরা মেশিন দিয়ে মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেতে পানি দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। রপ্তনিকারক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ২০ কোটি টাকার মিষ্টি কুমড়ার অর্ডার পেয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি কৃষকের জমি থেকে সরাসরি মিষ্টি কুমড়া কিনে প্যাকেটজাত করছেন। উৎপাদিত কুমড়া ভালো দামে বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হতে পারছেন। এখানকার উৎপাদিত কুমড়া বিদেশে পাঠানোর পাশাপাশি দেশের প্রায় ১৭ টি জেলাতেও পাঠানো হয়।

কৃষক চাঁন মিয়া বলেন, আমাদের উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া বিদেশেও যাবে। এরথেকে খুশির খবর আর কি আছে। চরে আগে তামাক চাষ হলেও এখন মিষ্টি কুমড়া বাদাম, ভুট্টা, শশা, স্কোয়াশ ও বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ হচ্ছে। আমরা নদীর পাড়ের মানুষ। প্রতি বছর আমাদের বসতবাড়ি নদীতে বিলিন হয়। তারপরেও আমরা ঘুরে দাঁড়াই। এবার মিষ্টি কুমড়াকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন। ইতোমধ্যে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ১৯ টাকা কেজি দরে ২০ বস্তা কুমড়া নিয়েছেন। আশা করছি আমার সব কুমড়া বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা লাভ করতে পারবো। এবছর আমি ৮০ শতাংশ জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছি। চাষে আমার ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

একই গ্রামের চাষি বুলবুলি বেগম বলেন, আমরা আগে তামাক চাষ করতাম। গত ৪ বছর ধরে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করছি। এই সবজি চাষে আমাদের বেশ উন্নতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুই লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করছি। আরও ৩-৪ লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করতে পারবো। এখানকার উন্নত জাতের মিষ্টি কুমড়া সর্বোচ্চ ৪-৫ কেজি ওজনের হয়। প্রথম দিকে ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি, এখন ১৬-১৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। তবে ছোট মিষ্টি কুমড়ার চাহিদা বেশি।

রংপুর এগ্রোর কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান রতন বলেন, আমরা চাষিদের কাছ থেকে ১৬-১৯ টাকা কেজি দরে জমি থেকেই কিনে নিচ্ছি। তারপর তা প্যাকেটজাত হয়ে বস্তায় ভরে ট্রাকে করে ঢাকায় পাঠাচ্ছি। সেখান থেকেই মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে পাঠানো হচ্ছে। আরো দুই দেশের প্রায় ২০ কোটি টাকার অর্ডার রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ৩ কোটি টাকার মিষ্টি কুমড়া পাঠিয়েছি।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, এখন দুই দেশে মিষ্টি কুমড়া রপ্তানি করা হচ্ছে। এতে চরাঞ্চলে টেকসই ফসল উৎপাদনও সম্ভব হচ্ছে। চাষিরা ভালো দামে বিক্রি করে লাভবান হতে পারছেন। এই চরের উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া খেতে খুবই সুস্বাদু। অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করা হয় বলে দেশ ও বিদেশের বাজারে এসব কুমড়ার চাহিদা অনেক বেশি। এগুলো চাষে কী/টনাশক ও কোনো ধরনের ক্ষ/তিকারক ও/ষুধও ব্যবহার করা হয় না।

Advertisement