Homeসব খবরজেলার খবরমাছের ঘেরে বাড়ছে বোরা ধানের আবাদ

মাছের ঘেরে বাড়ছে বোরা ধানের আবাদ

মৌসুমের শুরুতেই শীত ও কুয়াশাকে উপেক্ষা করে চাষের জমির পাশপাশি মাছের ঘেরে বোরো ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় চারা উৎপাদনও ভাল হয়েছে এবার। শেষ পর্যন্ত সব কিছু ঠিক থাকলে ধান উৎপাদনেও ভাল ফল পাবেন বলে আশা করছেন কৃষকরা। সাতক্ষীরায় মাছের ঘেরে বোরো ধান চাষে সাফল্য পাচ্ছে চাষিরা। প্রতি বছর মাছের ঘেরে বোরো ধানের আবাদ বাড়ছে।

সাতক্ষীরা জেলা শহরের আশপাশ এলাকার পাশাপাশি সাতটি উপজেলার প্রত্যান্ত এলাকায় নিচু জমিতে গড়ে উঠেছে সাদা মাছের ঘের। নভেম্বর-ডিসেম্বরে ঘেরে মাছ উঠিয়ে সেখানে করা হচ্ছে বোরো ধানের আবাদ। মাছের ঘেরে ধানের ফলন হয় অন্য জমির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। বর্ষায় সেই ঘেরে সাদা মাছের চাষ হয়।

কৃষকরা বলছেন, মাছের ঘেরে বোরো ধান লাগাতে বাড়তি কোন চাষের প্রয়োজন হয় না। ফলে খরচ অনেকটাই কম। অন্যদিকে মাছের তুলনায় ধানের দাম বেশি। চলতি মৌসুমে তারা মাছ চাষ কমিয়ে বোরো ধান চাষে বেশি ঝুঁকে পড়ছে মাছ চাষিরা। ফলে মাছের ঘেরে বোরো ধান ও সবজির সমন্বিত চাষের মাধ্যমে প্রান্তিক চাষিরা পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে বোরো মৌসুমে মাছের ঘেরে ধান চাষে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে সাতক্ষীরায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামার বাড়ি) সূত্র জানায়, জেলায় এবার ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে তালা উপজেলা সদরের ৩০০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে ট্রেতে বীজ বপন ও মেশিনে পাতা রোপণের মাধ্যমে হাইব্রিড তেজগোল্ড জাতের বোরো ধানের চাষাবাদ হচ্ছে। ফলে ধানের উৎপাদন এবার শতভাগ অর্জিত হবে বলে আশা করছেন কৃষকসহ কৃষি কর্মকর্তারা।

জেলার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, স্বল্প জমিতে অধিক ধান উৎপাদন করে মানুষের খাদ্য চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সাতক্ষীরায় উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সমলয় পদ্ধতিতে বোরোর চাষাবাদ শুরু হয়েছে। একইসাথে ফলন বাড়াতে সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের মাধ্যমে বোরো ধানের আবাদ শুরু হয়েছে জেলাতে। নতুন এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানালেন জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক। সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের মাধবকাটি বলাডাঙা বিলে সম্প্রতি এ আবাদ কার্যক্রম শুরু করা হয়।

সাতক্ষীরার বিনেরপোতা এলাকার ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্ত্ অলিউর রহমান জানান, ধান গাছের অবশিষ্টাংশ এবং সবজির উচ্ছিষ্টাংশ পচনের ফলে জৈব পদার্থ এবং নাইট্রোজেন ও ফসফরাস জাতীয় যৌগ উৎপন্ন হয় যা ঘেরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। মাছের খাবারের উচ্ছিষ্ঠাংশ ও মলমূত্র তলদেশে জমা হয়। তলদেশের জৈব উপাদান সমৃদ্ধ মাটি ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব ধান ও সবজি চাষ করে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। কৃষিনির্ভর উপকূলী জেলা সাতক্ষীরার অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৎস্য উপখাতের পাশা পাশি বোরোর আবাদ অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভবনাময় হয়ে উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে বোরো ধান চাষ করা ঝুঁকিপূর্ণ। এর পরিপ্রেক্ষিতে লবণাক্ততা পরিস্থিতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে বিবেচনা করে উপকূলীয় অঞ্চলে বোরো ধান চাষ সম্প্রসারণের জন্য কিছু বিশেষ কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে, যেমন-(১) লবণাক্ততা সহনশীল জাতের চাষ, (২) বীজ বোনার সময় পরিবর্তন, (৩) স্বাদু বা স্বল্প লবণাক্ত পানি দ্বারা সেচের ব্যবস্থা করা। উপকূলীয় জমিতে এই তিনটি কৌশল অবলম্বন করে বোরো ধানের চাষ ও উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামার বাড়ি) এর উপপরিচালক নূরুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে বেশি জমিতে বোরোর আবাদ হতে চলেছে। বিশেষ করে মৎস্য ঘেরে বোরোর আবাদে উৎপাদনে কৃষি খামার বাড়ি কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় জলবায়ুর ঝুঁ’কি মানচিত্র তৈরি করে কৃষি, খাদ্য ও অবকাঠামোসহ সবগুলো বিষয় নিয়ে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

Advertisement