Homeঅন্যান্যভোলায় বসে মহাকাশ দেখা!

ভোলায় বসে মহাকাশ দেখা!

মহাবিশ্বের সৌন্দর্য তাঁকে টেনেছিল কৈশোরেই। লাখো-কোটি গ্রহ-নক্ষত্র, নক্ষত্রপুঞ্জের রহস্য উদ্ঘাটনেও জন্মায় আগ্রহ। পরিণত বয়সে যখন সে আগ্রহ থেকে টেলিস্কোপ কিনতে যান, তখনই হোঁচট খান ভোলার নাজমুল আহসান জাহিদ। বেশি দাম দেখে নিজেই সিদ্ধান্ত নেন টেলিস্কোপ তৈরির। এই গল্প ২০১৬-১৭ সালের। তিনি তখন একটি বেসরকারি ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত। অবশেষে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন জাহিদ।

মাঝে কেটে গেছে চার-পাঁচ বছর। এরপর তাঁর হাতে তৈরি হয়েছে টেলিস্কোপ। যার নাম দিয়েছেন ইন্টারস্টেলার।
গত ফেব্রুয়ারি-মার্চে শুরু করেন টেলিস্কোপ তৈরির কাজ। এর আগে দীর্ঘ সময় ব্যয় করেন এ সম্পর্কে জানতে। পড়াশোনা করেছেন প্রচুর, সেই সঙ্গে সহায়তা নিয়েছেন ইন্টারনেটের। ভোলা শহরের মুসলিমপাড়ায় নাজমুল আহসান জাহিদের ঘরেই তিন-চার মাসে তৈরি হয়েছে পাঁচটি অ্যাস্ট্রোনমি গ্রেডের নিউটনিয়ান টাইপ ডবসোনিয়ান বেস টেলিস্কোপ। এমন টেলিস্কোপে মিরর থাকে দুটি, আইপিস একটি।

জাহিদ জানান, সব টেলিস্কোপের অ্যাপারচার (ব্যাসার্ধ) ১৫০ মিলিমিটারের (৬ ইঞ্চি)। তবে ফোকাল লেংথ ৫৪৬ থেকে ৭৫০ মিলিমিটারের। বর্তমানে এমন মাপের বিদেশি টেলিস্কোপের দাম ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে। তিনি এগুলো বিক্রি করতে চান ৩০-৩৫ হাজার টাকায়। এসব তৈরির জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি ঘুরতে হয়েছে নানা স্থানে। ছুটতে হয়েছে কাঠমিস্ত্রি থেকে ওয়ার্কশপ পর্যন্ত। জাহিদ মনে করেন, বিজ্ঞানচর্চাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দাম কম রাখা প্রয়োজন। সে জন্যই কেউ কেউ তাঁকে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিলেও তা মানেননি তিনি।

সেনাবাহিনীর সাবেক ওয়ারেন্ট কর্মকর্তা (বর্তমানে ব্যবসায়ী) মোহাম্মদ নূরুন্নবী ও আয়েশা বেগম দম্পতির সন্তান জাহিদ। তিনি ২০০১ সালে ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ভোলা সরকারি কলেজ থেকে ২০০৩ সালে পাস করেন এইচএসসি। পরবর্তী সময়ে নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে বি-ফার্ম ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক থেকে সম্পন্ন করেন এম-ফার্ম। ২০১১ সালে কর্মজীবন শুরুর পর কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি ওষুধ কোম্পানিতে। পারিবারিক কারণে ২০২১ সালের শেষ দিকে কাজ ছেড়ে ফেরেন বাড়ি। পরে কৈশোরের স্বপ্ন বাস্তবায়নে উদ্যোগী হন।

জাহিদ বলেন, জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতির্পদার্থ বিদ্যা বিষয়ে পড়াশোনা করায় আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয়। টেলিস্কোপ তৈরির বিষয়ে মনস্থির করার সময় বাণিজ্যিকভাবে বিপণনের বিষয়টিও মাথায় ছিল। যে কারণে একসঙ্গে পাঁচটি তৈরি শুরু করেন। ইতোমধ্যে অনলাইনে এগুলোর বেশ কয়েকটি বিক্রি চূড়ান্ত হয়েছে। তবে এই পথে কম বাধাবিপত্তি পেরোতে হয়নি জাহিদকে। লোকের কটূ কথার পাশাপাশি পারিবারিক অসহযোগিতাও ছিল। কারণ, সাড়ে ৬ বছর ও ২ বছর বয়সী দুই মেয়ের বাবার এমন পাগলামি কোনো পরিবার সহজে নেয়! তবে সফলভাবে টেলিস্কোপ তৈরি এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে। প্রতিদিন ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষ আসেন। পরিবারও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

শুক্রবার শিশুসন্তানকে নিয়ে টেলিস্কোপে চাঁদ-তারা দেখেন ব্যবসায়ী সুফিয়ান। তিনি বলেন, ‘খালি চোখে আকাশের চাঁদ-তারা বহুবার দেখেছি। কিন্তু টেলিস্কোপে যেভাবে দেখলাম, তার মজাই আলাদা।’ এখন জাহিদের লক্ষ্য নতুন ডবসোনিয়ান বেজ টেলিস্কোপ তৈরি, যার সঙ্গে যুক্ত থাকবে ইকোটোরিয়াল প্ল্যাটফর্মও। এ কাজে সফল হলে গ্রহ-নক্ষত্রের আরও ভালো মানের ছবি তুলতে পারবেন তিনি, যা দেশের অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

জাহিদের এ কাজের প্রশংসা করেন বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমি রিসার্চ কোলাবোরেশন (বার্ক) সিইও হাসিবুল হোসেন রিফাত। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে টেলিস্কোপ কেনা খুব ব্যয়বহুল। এটি যদি দেশেই তৈরি করা সম্ভব হয়, তবে দেশের জ্যোর্তির্বিজ্ঞান চর্চা এগিয়ে যাবে। বার্কের মাধ্যমে ২৫-৩০ হাজার ছাত্র প্রতিদিন অনলাইনে বিনা খরচে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা করে যাচ্ছেন। অনেকেই অল্প খরচে টেলিস্কোপ কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সস্তায় পাওয়া গেলে এ চর্চা সহজ হবে।

সূত্র: সমকাল।

Advertisement