Homeসব খবরজেলার খবরবি’ষমুক্ত সবজি উৎপাদনে সফল সফিকুল, রপ্তানি করছেন বিদেশেও!

বি’ষমুক্ত সবজি উৎপাদনে সফল সফিকুল, রপ্তানি করছেন বিদেশেও!

অভাবগ্রস্ত অবস্থায় থাকার সময় কেউ চিনতো না। অথচ সেই সফিকুলের নাম আজ তাঁর গ্রামের সবার মুখে মুখে। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করে তিনি দারিদ্র্য জয় করেছেন। তাঁর জমিতে হওয়া লাউ যাচ্ছে বিদেশে। তাঁর দেখাদেখি এলাকার অনেকেই সবজি চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। এ কারণেই কৃষিতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার ও সম্প্রসারণে উদ্বুদ্ধ করে তিনি পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪২৫ (ব্রোঞ্জপদক)। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার সরাবদী আতাদি গ্রামের সফিকুল বিষমুক্ত সবজি চাষে সফল হয়েছেন। এই উপজেলার মাটি সবজি চাষের জন্য উর্বর হওয়ায় সব ধরনের সবজির ভালো ফলন হয়।

সফিকুলের ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা করার ইচ্ছা থাকলেও অভাবের কারণে সেটা আর সম্ভব হয়নি। বাবার সাথে থেকে কৃষি কাজ করতেন আর একটি স্পিনিং মিলে কাজ করতেন। মিলে কাজ করে যা বেতন পেতেন তাতে তার ভবিষ্যতে কিছু করা যেত না। তাই তিনি মিলের কাজ ছেড়ে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন। তাঁর উৎপাদিত সবজির মধ্যে ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের লাউ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে তিনি লাউ, মিষ্টিকুমড়া, টমেটো, বেগুন, শসা, মরিচ, ঝিঙে, চিচিঙ্গাসহ নানা ধরনের সবজি উৎপাদন করছেন।

সফিকুল বলেন, লেখাপড়া করার ইচ্ছা থাকলেও অভাবের কারণে করতে পারিনি। তবে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পেরেছি। ২০০৮ সালে পৈতৃক ১২ শতাংশ বাড়ি আর ১৫ শতাংশ ফসলি জমি পেয়েছি। চাষাবাদ করার মতো কেনো জমি না থাকলে গ্রামে তখন ১ বিঘা খালি জমি পাই। সেই পরিত্যক্ত জমির মধ্যেই প্রথম সবজি উৎপাদন শুরু করি। মিলে কাজ করার সময় এই জমিতে সবজির চাষ করতাম। তবে মিলে ১২-১৬ ঘন্টা কাজ করে কৃষি কাজ করাটা অনেকটা কঠিন ছিল।

তিনি আরও বলেন, প্রায় শূন্য হাতে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ৫ বিঘা জমি ধারে লিজ নিয়ে সবজি উৎপাদন শুরু করি। এক বছর পর সবজি উৎপাদন করে জমি লিজের টাকাসহ উৎপাদন খরচ পরিশোধ করি। তারপর তাদের পরামর্শে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের প্রতি উদ্বুদ্ধ হই। দ্বিতীয় বছর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল কাদিরের পরামর্শে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন শুরু করি।

সফিকুল বলেন, বর্তমানে সফিকুল ইসলাম ২০ বিঘা জমিতে বছরের ৯ মাস সবজি উৎপাদন করি। বর্তমানে তিনি লাউ, মিষ্টিকুমড়া, টমেটো, বেগুন, শসা, মরিচ, ঝিঙে, চিচিঙ্গাসহ নানা ধরনের সবজি উৎপাদন করছি। বর্ষার মৌসুমে পাট ও ধান উৎপাদন করি। প্রতি বিঘা জমিতে কম করে হলেও ৫ হাজার লাউ হয়। ২০ বিঘা জমির ফসল উৎপাদনে বছরে পাঁচ লাখের মতো খরচ। অন্তত ১২ টন টমেটো হয় বিঘাপ্রতি।

তিনি বলেন, সবজি চাষ করে আমি নিজেই সফল হইনি, আমার জমিতে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ জন শ্রমিক সারা বছর কাজ করেন। তাদেরও কর্মসংস্থান হয়েছে। গ্রামের কৃষকদের নিয়ে একটি সংগঠন তৈরী করেছি। সেই সংগঠনের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছি। বর্তমানে গ্রামের অন্তত ৮০ ভাগ লোক এখন করেন কৃষিকাজ।

কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, সফিকুলের মতো যুবকের সাফল্য দেখে এখন অনেকেই কৃষিতে যুক্ত হচ্ছেন। নিরাপদ কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন ও খাদ্য উৎপাদনে সফিকুল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

Advertisement