Homeসব খবরবিনোদনবাংলাদেশের আতিথেয়তা পৃথিবীর কোনো দেশে পাওয়া যাবে না :...

বাংলাদেশের আতিথেয়তা পৃথিবীর কোনো দেশে পাওয়া যাবে না : শ্রীলেখা মিত্র

কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনা ও প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। ‘একবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ তার নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘এবং ছাদ’ অফিসিয়াল সিলেকশনে জায়গা পেয়েছে। এ উপলক্ষে ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় এসেছেন তিনি। ‘এবং ছাদ’ সোমবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শনী হয়। সিনেমা প্রদর্শন শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন অভিনেত্রী।

নিজ শহর কলকাতা আমার সিনেমা দেখায়নি। কিন্তু বাংলাদেশ সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছে। বাংলাদেশে এসে প্রথমবার সিনেমাটি দর্শক সারিতে বসে দেখলাম। নিজ শহরে বসে দেখতে পারলে ভালো লাগত। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আমার সিনেমা জায়গা পায়নি। এর জন্য একটা আক্ষেপ রয়েছে যে, আমার শহরের মানুষদের আমার নির্মাণ দেখাতে পারিনি। এই দুঃখটা থাকবে।

তবে বাংলাদেশে এসে যে ভালোবাসা পেলাম তা কখনো ভুলব না। কলকাতার মানুষ যে মর্যাদা দিতে পারেনি সেটি বাংলাদেশের মানুষ দিয়েছে। বাংলাদেশে দ্বিতীয় নির্মাণ দেখাতে পেরে আনন্দিত ও গর্বিত কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। এভাবেই নিজের অনুভূতি ভাগ করলেন অনুরাগীদের সঙ্গে।

এসময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতদিন অভিনেত্রী হিসেবে অন্য মানুষের কাজে অভিনয় করেছি। এবার ক্যামেরার পেছনে অভিনেত্রী শ্রীলেখা নিজের লেখা, ভাবনা নিয়ে কাজ করেছে। পরিচালক এবং অভিনেত্রী কখনো এক আবার কখনো আলাদা। যেহেতু অভিনয় করি তাই জানতে চেষ্টা করেছি একজন অভিনয়শিল্পীর ক্যামেরার পেছনে কী কী দরকার হয়। কীভাবে বুঝিয়ে দিলে তার পক্ষে সুবিধা হয়। সেটা আমার কাছে জানার চ্যাপ্টার হয়েছে। নির্মাতা হয়ে এটি খুব উপভোগ করছি।

যেটা করতে চেয়েছিলেন তার কতটুকু দিতে পেরেছেন? উত্তরে শ্রীলেখা বলেন, বাজেট বেশি থাকলে আরও ভালো করার সুযোগ থাকত। আরও ভালো কিছু দিতে পারতাম। প্রতিটি কাজে বাজেট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাজেট ভালো হলে অনেক ভালো কাজ উপহার দেয়া যায়। তবে সবাই কাজটি দেখে তাদের ভালো লাগার কথা জানিয়েছে। তাদের ভালো লাগা আমাকে আনন্দিত করেছে।

তবে এই অভিনেত্রী মনে করেন নির্মাণ অনেক চ্যালেঞ্জিং। ‘এবং ছাদ’ চ্যালেঞ্জ নিয়েই নির্মাণ করেছেন। তবে অভিনয়ও অনেক চ্যালেঞ্জিং। যে কোনো কাজই চ্যালেঞ্জিং। সেটা মন দিয়ে করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। তবে এই কাজটি করেতে গিয়ে প্রযোজনা, পরিচালনা ও অভিনেত্রী এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে করতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু তাদে বেগ পেতে হয়নি। আনন্দ নিয়েই কাজটি করেছেন তিনি। এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন পরবর্তী কাজের।

বাজেট পেলে নিয়মিত নির্মাণ করতে চান শ্রীলেখা। নির্মাণে তার তুমুল আগ্রহ রয়েছে। নির্মাণের পাশাপাশি প্রযোজক-পরিচালকরা চাইলে নিয়মিত অভিনয় করার আগ্রহ রয়েছে। ভালো গল্প পেলে নিয়মিত কাজ করবেন নির্মাণ ও অভিনয়ের দুই মাধ্যমে। বাংলাদেশের নাটক, সিনেমা ও সিরিজ দেখেন শ্রীলেখা। তার পছন্দের তালিকায় রয়েছেন প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদ। তার লেখার বড় ভক্ত অভিনেত্রী। তার ভাষায়, এখন বাংলাদেশের কাজ অসাধারণ হচ্ছে।

আজকাল শিল্পী কম তারকা বেশি। শিল্পী হতে হলে অনেক কিছু হতে হয়। প্রথমত ভালো মনের হতে হয়। দ্বিতীয়ত কাজে সততা থাকতে হয়। ভালো মানুষ না হলে ইমোশনালগুলো পর্দায় দেখাতে পারব না। এখন প্রচণ্ড তারকা। কার কত ফলোয়ার এসব গুনে মান নির্ণয় করা হয়। কলকাতার রাজনৈতিক বিষয়ে সবাই অবগত। তাদের স্রোতে আমি গা ভাসাতে পারিনি। যার কারণে আমি অনেকটা বঞ্চিত। চাইলে অনেক কাজ করতে পারি। তবে সেই মানহীন কাজ করতে চাই না। এখন মনের মতো কাজ করতে চাই। যোগ করলেন শ্রীলেখা।

একটা সময় বাংলাদেশের এন্টেনা ঘুরিয়ে এদেশের নাটক-সিনেমা দেখতেন কলকাতার দর্শক। সেই তালিকায় রয়েছেন শ্রীলেখাও। কিন্তু সেই সাংস্কৃতি বিনিময় এখন আর হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে অভিনেত্রী বলেন, মাঝে বাংলাদেশের সিনেমা খুব খারাপ হয়েছে। সে কারণে কাজগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল দর্শক। আমারও কাজগুলো ভালো লাগত না। এখন ভালো হচ্ছে। দুই দেশের অবাধ সাংস্কৃতিক বিনিময় হওয়া উচিত। এদেশের নির্মাতারা আমাকে নিয়ে কাজ করতে চাইলে আপত্তি নেই। আমি কাজ করতে প্রস্তুত আছি।

বাবার দেশ নিয়ে কেউ খারাপ মন্তব্য করুক তা চান না শ্রীলেখা। বলেন, বাংলাদেশ আমার বাবার দেশ। তার মানে এটি আমারও দেশ। এ দেশ নিয়ে স্মরণীয় কিছু চাই। এ সম্পর্কে কেউ খারাপ বলুক তা চাই না। বাংলাদেশের এই বাংলাকে ভালোবাসা সবচেয়ে আনন্দদায়ক। এখন কলকাতায় সবাই খিচুড়ি ভাষায় কথা বলে। এ দেশের মানুষ বাংলাকে ভালোবেসে বাঁচিয়ে রেখেছে। গর্বের সাথে বাংলা নিয়ে ভাবছে, স্বপ্ন দেখছে। এটা বিরাট একটি ভালো দিক। বাংলাদেশের আতিথেয়তা পৃথিবীর কোনো দেশে পাওয়া যাবে না।

ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তো দুই বাংলার শিল্পীরা এক হচ্ছে। আপনাকে কবে দেখা যাবে সেই তালিকায়? আমি কাজ করতে চাই। আমাকে নিয়ে ভাবলে কাজ করতে অনীহা নেই। তবে আমি অনেক শত্রু করে ফেলেছি। সত্যি কথা বলার মাশুল দিতে হচ্ছে। যে সরকার রাজ্য চালাচ্ছে তাদের সম্পর্কে কথা বলি। তাদেরকে খুশি করার জন্য একটি গোষ্ঠী আছে। তারা ভাবেন—শ্রীলেখাকে নিলে আবার ওই সরকার যদি ক্ষুণ্ণ হন। যার কারণে আমাকে কেউ কাজে নেয় না।

গেল বছর সেভাবে অভিনয় দেখা যায়নি তাকে। তবে আসছে ফেব্রুয়ারিতে একটি সিনেমায় কাজ করবেন। এতে বাংলাদেশ থেকে ফেরদৌস আহমেদ কাজ করবেন। ফেরদৌস প্রসঙ্গ আসতেই অভিনেত্রী অতীত স্মরণ করিয়ে বলেন, ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ সিনেমায় ফেরদৌসকে নেয়ার জন্য নির্মাতাকে আমিই বলেছিলাম। তবে সেটা আজও কোথায়ও বলেনি ফেরদৌস।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে জানতে চাইলে শ্রীলেখা বলেন, অপ্রাপ্তি থেকে আমার প্রাপ্তিই বেশি। প্রাপ্তি হয়েছে বলেই আজ বাংলাদেশে আমার কাজ নিয়ে এসে কথা বলতে পারছি। নেগেটিভ না ভেবে সবসময় পজিটিভ ভাবতে চাই। তাই প্রাপ্তিই অনেক বেশি।

বাবাবিহীন প্রথমবার এলেন বাবার দেশে। এর আগে বাবার সঙ্গেই এসেছিলেন তিনি। আলাপচারিতা ফাঁকে বাবার কথা বলতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে যান শ্রীলেখা। এক পর্যায়ে তার চোখের কোনে পানি এসে যায়। বলতে গিয়ে থেমে যান তিনি। কিছুটা সময় ব্যয় করে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলেন, বাবাকে ভীষণ মিস করছি।

চোখের পানি লুকিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কান্না পেলে তা লুকানোর চেষ্টা করি। কিন্তু এটার মধ্যে দুর্বলতা নেই। কান্নাটা হচ্ছে একটা ইমোশন। এটি খুবই পিউর একটি ইমোশন। ছেলেরা কান্না পেলে কাঁদবে না সেটা ভুল কথা। ইমোশনের কাছে ছেলে-মেয়ে ব্যাপার না। কান্না পেলে সবাই কাঁদবেন। মন খুলে কাঁদবেন। তাহলে অনেকটা হালকা লাগবে।

‘বিটার হাফ’ এর পর ‘এবং ছাদ’ বাজেট পেলেই তৃতীয় নির্মাণ ‘বারান্দা’ নির্মাণ করবেন তিনি। এখন প্রযোজকের অপেক্ষায় এই নির্মাতা-অভিনেত্রী। নিজের গল্প ও ভাবনা নিয়েই কাজ করতে চান শ্রীলেখা। বাজেট পেলে নিয়মিত নির্মাণে থাকতে চান তিনি।

শ্রীলেখা মিত্রের পূর্বপুরুষের বসত ছিল মাদারীপুরের ঘটমাঝি গ্রামে। দেশভাগের সময় ভারতে পাড়ি দেন তারা। শ্রীলেখার জন্ম ভারতে হলেও বাবার মুখে ঘটমাঝি গ্রামের গল্প শুনে বেড়ে উঠেছেন তিনি। তাইতো বাংলাদেশের প্রতি রয়েছে তার অন্যরকম টান।

২০১৭ সালের আগে বাবা সন্তোষ মিত্রকে নিয়ে পূর্বপুরুষের ভিটার খোঁজে বাংলাদেশে এসেছিলেন শ্রীলেখা। তার কয়েক বছর পর তার বাবার মৃত্যু হয়। বাবাবিহীন প্রথমবার প্রিয় শহরে আসলেন অভিনেত্রী। এদিন, তিনি শাড়ি, গয়নায় সনাতনী সাজে সেজেছিলেন। আপাদমস্তক বাঙালিনী। এ সাজে নজর কেড়েছে আট থেকে আশির।

Advertisement