Homeসব খবরজেলার খবর‘পরতে চেয়েছিল শেরওয়ানি, ফিরল কাফনের কাপড় পরে’

‘পরতে চেয়েছিল শেরওয়ানি, ফিরল কাফনের কাপড় পরে’

আজ সোমবার দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিহত হাদিসুরের মরদেহ গ্রহণ করতে এসে হাদিসুরের খালা শিরিন আক্তার হাদিসুরের স্মৃতিচারণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান এ বছর দেশে ফিরে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তার খালা শিরিন আক্তার।

শিরিন আক্তার বলেন, ‘হাদিসুর আমাকে বলেছিল, খালা তোমরা এবার মেয়ে দেখ। আমি বিয়ে করব। আমি এবার আর কোনো আপত্তি করব না। সেই বাবা আমার শেরওয়ানি পরতে চেয়েছিল। কিন্তু দেশে ফিরল কাফনের কাপড় পরে।’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

সর্বশেষ ফোনালাপের স্মৃতিচারণ করে শিরিন আক্তার বলেন, ‘যুদ্ধ শুরুর পর আমরা সবাই যখন চিন্তায় আছি তখন সে বলেছিল তারা ভালো আছে, নিরাপদে আছে। আমার হাতে অপারেশন হয়েছে শুনে বলত, খালা রাত করবা না। তাড়াতাড়ি ঘুমাবে। সব তো শেষ হয়ে গেল।’

এদিকে, আজ সোমবার বেলা ১২টার পর হাদিসুরের মরদেহ বহনকারী টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। হাদিসুর রহমানের মরদেহ গ্রহণ করেন তার ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স। হাদিসুর রহমানের মরদেহ বুঝে নিতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন- তার চাচা মিজানুর রহমান, হারুনুর রশিদ ও আব্দুল জব্বার, খালু তসলিম আহমেদ লাবু ও খালা শিরিন আক্তার। অসুস্থতাজনিত কারণে হাদিসুরের বাবা-মা বিমানবন্দরে আসতে পারেননি। এ সময় হাদিসুরের পরিবারের সঙ্গে ছিলেন বরগুনা-২ আসনের এমপি শওকত হাসানুর রহমান রিমন।

ভাইয়ের কফিন ছুঁয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রিন্স। তার আহাজারিতে বিমানবন্দরের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। এরপর বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বরগুনার বেতাগীর হাসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে রওনা হন পরিবারের সদস্যরা। মরদেহ গ্রহণ করার পর শওকত হাসানুর রহমান রিমন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত পদক্ষেপের কারণে আমরা হাদিসুরের মরদেহ তার বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে পারছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দায়িত্ব পালন করেছেন, বাকি যা কিছু করার তিনি করবেন।

শনিবার বিকেলে হাদিসুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পারিবারিক কবরস্থানে এরমধ্যেই কবরের নমুনা করে রাখা হয়েছে। বিদেশে প্রাণ হারানো হাদিসুরকে শেষবারের মতো এক নজর দেখতে আসা লোকজন যেন কোনো ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই তাকে দেখতে পারে এজন্য নেয়া হয়েছে সব প্রস্তুতি। এছাড়া তার বাড়ির উঠানে টাঙানো হয়েছে সামিয়ানা, আগত লোকজনকে বসতে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে চেয়ার।

চাচা মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, আগামী মঙ্গলবার বেলা ১০টায় বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে জানাজা হবে। এরপর মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে হাদিসুরকে সমাহিত করা হবে। দাদা আতাহার উদ্দীন হাওলাদার এবং দাদি রোকেয়া বেগমের কবরের পাশেই তাদের আদরের নাতিকে সমাহিত করা হবে বলে জানা গেছে।

Advertisement