Homeসব খবরবিনোদনপদ্মায় প্রচুর ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ছে

পদ্মায় প্রচুর ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ছে

মৎস্যজীবী ও ইলিশ ব্যবসায়ীদের মতে ইলিশ রক্ষায় ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা বন্ধ করতে প্রতি বছর নি’ষেধাজ্ঞার সময় বাড়িয়ে কমপক্ষে এক মাস করতে হবে। কারণ সাগর থেকে ডিমওয়ালা ইলিশ মিঠা পানির পদ্মা ও এর শাখা নদীতে আসতে সাত-আট দিন লেগে যায়। তাই ২২ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে সাগর থেকে আসা সব ইলিশ ডিম দেয়া শেষ হয়ে যেত। তাতে নদীতে এর চেয়ে দ্বিগুণ ইলিশ পাওয়া যেত। তাই সরকারের কাছে মৎস্যজীবীদের দাবি আগামী বছর থেকে নদীতে মাছ ধরা পুরো অক্টোবর মাস বন্ধ করতে হবে। নিষেধাজ্ঞার পর রাজবাড়ীর পদ্মায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। এর মধ্যে ডিমওয়ালা ইলিশ চোখে পরার মতো।

মা ইলিশ রক্ষায় টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে ২৮ অক্টোবর শুক্রবার মধ্যরাতে। নি’ষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরপরই রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে পদ্মার ইলিশ মাছ আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ডিমওয়ালা ইলিশ চোখে পড়ার মতো। বাজারে মাছ অনেক থাকায় দাম কিছুটা কম ছিল। শুধু গত শনিবার রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া বাজারে ৪০ লাখ টাকার বেশি ইলিশ বিক্রি হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান ও অন্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সারা দেশে ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন নদীতে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এই সময় ইলিশ মাছ বিপণন, পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও মজুতেও নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে গত শুক্রবার রাত থেকেই রাজবাড়ী বড় বাজার ও গোয়ালন্দের দৌলতদিয়াঘাট বাজার, অন্তারমোড় বাজার, পৌর জামতলা বাজার, চর দৌলতদিয়া হাট, উজানচর জামতলা বাজারে বিক্রেতারা প্রচুর ইলিশ নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। এর মধ্যে ডিমওয়ালা ইলিশের পরিমাণ কম নয়।

রোববার সকাল ৭টার দিকে রাজবাড়ীর বড় বাজার ও পদ্মার মৌলবীর ঘাটে এবং দৌলতদিয়াঘাট টার্মিনাল–সংলগ্ন বাজারে দেখা যায়, সেখানে অনেক মানুষের সমাগম। ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের ইলিশ বাজারে উঠেছে। জেলেরা ভ্যানে ঝুড়ি ভর্তি করে ইলিশসহ অন্য মাছ বিক্রি করতে আসছেন। অধিকাংশ ইলিশ মাঝারি আকারের। একটু বড় ইলিশ হলে সেগুলোর পেটভর্তি ডিম।

বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছোট আকারের ইলিশ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, মাঝারি আকারের ইলিশ ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকায়, ১ কেজির কাছাকাছি ওজনের ইলিশ ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায়, ১ কেজি থেকে দেড় কেজির ইলিশ ১১০০ থেকে ১৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেড় কেজি বা তার ওপরের বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকায়। আড়ত ঘরের সামনে ডালার ওপর ইলিশ রেখে নিলামে হাঁকডাক করে বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের সরবরাহ বেশি হওয়ায় ছোট ও অন্য মাছের দাম তুলনামূলক কম যাচ্ছে।

রাজবাড়ীর পদ্মার ঘাটে মাছ কিনতে আসা অনেকই বলেন, প্রচুর ইলিশ ধরার খবর পেয়ে ভোরে মাছ কিনতে এসেছি। অনেকেই ১০-১৩ হাজার টাকার মাছ কিনেছেন। পদ্মার ইলিশ কয়েক দিন পর পাওয়া যাবে না। পাওয়া গেলেও দামের কারণে কাছে যাওয়া যাবে না। ঢাকায় থাকা আত্মীয়দের বাসায় পাঠাতে হবে, তাই বেশি কিনেছি।

গোয়ালন্দ উপজেলার ব্যবসায়ী তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, বাজারে প্রচুর ইলিশ উঠেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বেশির ভাগ ইলিশের পেটভর্তি ডিম। ৫০০ গ্রাম থেকে এক কেজি বা তার ওপরের ইলিশের পেটভর্তি ডিম। সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা আরো ১০ থেকে ১৫ দিন বাড়ানো উচিত। তাহলে এসব ইলিশ ডিম ছেড়ে দিত বা এত ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ত না।

দৌলতদিয়াঘাট বাজার ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি মোহন মণ্ডল বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে গত শনিবার প্রথম দিনে এই বাজারে ২০ লক্ষাধিক টাকার ইলিশ বিক্রি হয়েছে। ইলিশের এই সরগরম হয়তো আরো তিন থেকে চার দিন থাকতে পারে। তবে তিনিও মনে করেন- ‘নদী মাছ ধরা আর সাত-আট দিন বন্ধ থাকলে নদীতে পানির সমান মাছ পাওয়া যেত।’

Advertisement