Homeধর্মজীবন সায়াহ্নে মহানবী (সা.)-এর বদলে নামাজ পড়ান যিনি

জীবন সায়াহ্নে মহানবী (সা.)-এর বদলে নামাজ পড়ান যিনি

রাসুলের অপেক্ষায় সাহাবিরা : উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর বর্ণনানুযায়ী রাসুল (সা.) সোমবারে তাঁর ঘরে আসেন। বুধবার দিবাগত রাত পর্যন্ত যথারীতি মাগরিবের নামাজ পড়ান। ইশার সময় খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সাহাবায়ে কেরাম মসজিদে নববিতে প্রিয় নবীর পেছনে নামাজ আদায় করবেন—এই আশায় অপেক্ষমাণ।

আবু বকর (রা.)-কে নামাজ পড়ানোর নির্দেশ: রাসুল (সা.) একে একে তিনবার ওঠার চেষ্টা করেন; কিন্তু তিনবারই বেহুঁশ হয়ে পড়েন। হুঁশ ফিরে পেলেই জিজ্ঞেস করতেন, আমার সাহাবিরা এশার নামাজ পড়েছে? আয়েশা (রা.) জবাব দিতেন, না, তারা তো আপনার অপেক্ষায় আছে। তৃতীয়বার উঠে বললেন, আবু বকরকে নামাজ পড়াতে বলো। আয়েশা (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি কোমল হৃদয়ের মানুষ। নামাজে দাঁড়ালে হয়তো ঠিকমতো কিরাতও পড়তে পারবেন না। এভাবে রাসুল (সা.) দুই বা তিনবার আবু বকর (রা.)-এর নাম প্রস্তাব করলেন। আয়েশা (রা.) প্রতিবার একই জবাব দিলেন। অপর বর্ণনা মতে, আয়েশা (রা.) স্পষ্টভাবে ওমর (রা.)-এর নাম প্রস্তাব করেছেন। কিন্তু প্রতিবার প্রিয় নবী (সা.) আবু বকর (রা.)-এর কথাই বলেন।

সাহাবিদের সঙ্গে শেষ নামাজ: রাসুল (সা.)-এর নির্দেশে আবু বকর (রা.) এশার নামাজ পড়ালেন। ফজরের নামাজও পড়ালেন। বৃহস্পতিবার জোহরের সময় রাসুল (সা.) একটু সুস্থতা অনুভব করলেন। আব্বাস (রা.) ও আলী (রা.)-এর কাঁধে ভর করে মসজিদে গেলেন। ততক্ষণে আবু বকর (রা.)-এর পেছনে জামাত শুরু হয়ে গেছে। রাসুল (সা.)-এর আগমন দেখে আবু বকর (রা.) একটু সরে দাঁড়ালেন। বহনকারীরা রাসুল (সা.)-কে আবু বকর (রা.)-এর বাঁ পাশে বসিয়ে দিলেন। আবু বকর (রা.) মুক্তাদি হয়ে গেলেন আর রাসুল (সা.) ইমাম হয়ে নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে প্রিয় নবী সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশে বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিলেন। এটি ছিল মসজিদে নববিতে রাসুল (সা.)-এর সর্বশেষ আগমন, মিম্বরে অবস্থান আর সর্বশেষ ভাষণ। (আসাহহুর সিয়ার, পৃষ্ঠা ৫২৮)

রাসুলের অনুপস্থিতিতে আবু বকরের ইমামতি: অতঃপর মিম্বর থেকে নেমে আয়েশা (রা.)-এর কামরায় গেলেন। আসর থেকে আর আসতে পারেননি মসজিদে। আবু বকর (রা.) যথারীতি নামাজ পড়ালেন প্রিয় নবীর ইন্তেকাল পর্যন্ত। আবু বকর (রা.) রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় তাঁর অন্তিম সময়ে ২১ ওয়াক্তের নামাজ পড়ান। সিহাহ সিত্তার বর্ণনার আলোকে বুধবার থেকে ইন্তেকালের দিন সোমবারের ফজর পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার জোহর ছাড়া) ২১ ওয়াক্ত হয়। (আসাহহুর সিয়ার, পৃষ্ঠা ৫২৮-৫৩৩)

সাহাবাদের প্রতি প্রিয় নবীর শেষ দৃষ্টি: বৃহস্পতিবার জোহরের পর থেকে প্রিয় নবী (সা.) আয়েশা (রা.)-এর কামরায় শয্যাশায়িত। তিন দিন পর্যন্ত বের হলেন না। আগের নিয়মানুযায়ী আবু বকর (রা.) সোমবার ফজরের নামাজ পড়াচ্ছিলেন। সাহাবায়ে কেরাম সারিবদ্ধভাবে নামাজ আদায় করছিলেন। এমন সময় রাসুল (সা.) আয়েশা (রা.)-এর কামরার পর্দা সরিয়ে সাহাবায়ে কেরামের দিকে একনজর তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। সাহাবায়ে কেরামও নবীজির দিকে তাকালেন। আহ! কী সুন্দর চেহারা! কী উজ্জ্বলতা! এর আগে এমন দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়নি।

তাঁরা ভাবলেন, নবীজি নামাজ পড়াবেন। আবু বকর (রা.)ও এমনটা ভেবে পেছনে সরতে চাইলেন। কিন্তু না, তিনি ইশারা করে বলেন, তোমরা তোমাদের নামাজ পূর্ণ করো। ওই দিন (সোমবার) চাশতের সময় নবীজি দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেন। (মুসলিম ১/১৭৯; আসাহহুর সিয়ার, পৃষ্ঠা ৫৩৩)

সূত্র: কালের কণ্ঠ অনলাইন।

Advertisement