Homeসব খবরজেলার খবরজিলাপির কারিগর ঊষারাণী ১৪ ঘন্টা খেটে পান ১৭০ টাকা

জিলাপির কারিগর ঊষারাণী ১৪ ঘন্টা খেটে পান ১৭০ টাকা

খুব অল্প বয়সেই স্বামীকে হারিয়ে ষাটোর্ধ্ব শ্রীমতি ঊষারাণীর জীবনে নেমে আসে অন্ধকারের ছায়া। তাঁর জন্ম দরিদ্র পরিবারে। জীবনযু’দ্ধে ছুটছিলেন জীবিকার সন্ধানে। এরই মধ্যে যোগ দেন একটি মিষ্টির দোকানে। ফুটপাতের এ দোকানেই কয়েক যুগ ধরে গুড়ের জিলাপির কারিগর হিসেবে কাজ করছেন। সেখানে টানা ১৪ ঘণ্টা কাজ করে মজুরি পাচ্ছেন ১৭০ টাকা।

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের খামার বাগচি গ্রামের মৃত জগন্নাথ চন্দ্রের মেয়ে শ্রীমতি ঊষারাণী। বিয়ের এক বছর পরই কোলজুড়ে জন্ম নেয় ফুটফুটে একটি কন্যাসন্তান। ভালোই চলছিল সংসার। এরই মধ্যে মারা যায় স্বামী সুবল চন্দ্র। কোলের শিশু সন্তান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় তাকে। নেই স্বামীর আর্থিক সচ্ছলতা। তাঁর বয়স যখন ১৯ বছর, তখন বিয়ে হয় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হাতিয়া গ্রামের সুবল চন্দ্রের সঙ্গে।

জীবন-জীবিকা একেবারই থমকে যায়। বাধ্য হয়ে আবারও বসবাস শুরু করেন বাবার বাড়িতে। বাবা জগনাথ চন্দ্রও দিন আনে দিন খায়। একপর্যায়ে সাদুল্লাপুর বাজারের ভাই ভাই জিলাপী স্টোরে আশরাফুল ইসলামের একটি ফুটপাতের মিষ্টির দোকানে কাজ নেয়। সেখানে তৈরি করে দেয় গুড়ের জিলাপি। সেই সময়ে মজুরি ছিল তার ৩ টাকা। জীবিকার সন্ধানে কোলের শিশুকে নিয়ে ছুটতে হয় এদিক-সেদিক। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে সন্তানটি।

প্রায় ৪১ বছর ধরে একই দোকানে কাজ করে চলেছেন তিনি। বর্তমানের মজুরি পান ১৭০ টাকা। এর আগে তার একমাত্র মেয়ে শিল্পী রাণীকে অনেক কষ্টে বিয়ে দিয়েছে। থাকার টিনসেড ঘরটিও জরাজীর্ণ অবস্থায়। সারাদিন পরিশ্রম করে ঘরে ভালোভাবে ঘুমাবেন, সেটিও সম্ভব হয় না তার। এভাবে তরুণী বয়স থেকে স্বামীহারা হয়ে এখন বৃদ্ধা বয়স পর্যন্ত জীবন সংগ্রামে অব্যাহত রয়েছে ঊষারাণীর। ঝুঁ’কিপূর্ণ ঘরে ঝড়-বৃষ্টির আত’ঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।

শ্রীমতি ঊষারাণী বলেন, একটি সন্তান রেখে আমার স্বামী মারা গেছেন ৪১ বছর আগে। সেই থেকে একই দোকানে জিলাপি বানানোর কাজ করছি। এখন সকাল ৮ থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত কাজ করে দৈনিক মজুরি পাই ১৭০ টাকা। অথচ পুরুষ শ্রমিকের কাজের মজুরি দেওয়া হয় ৪০০ টাকা। তিনি আরও বলেন, আমার বাপে ৫ শতক জমি দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৩ শতক জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাকি ২ শতক জমিতে একটি টিনের ঘর তুলে কোনমতে বসবাস করছি। আমাকে যদি সরকারিভাবে একটি পাকা ঘর দিতেন, হয়তো শেষ বয়সে আরাম-আয়েশে রাতযাপন করতে পারতাম।

Advertisement