Homeসব খবরজেলার খবরঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনায় আজও নতুন করে...

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনায় আজও নতুন করে ভেঙেছে বেড়িবাঁধ

ঘূর্ণিঝড় যশের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনায় বৃহস্পতিবারও নতুন করে ভেঙেছে বেড়িবাঁধ। ভেসে গেছে ঘর-বাড়ি। দুপুরের প্রবল জোয়ারের পানিতে কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লবণ পানিতে ভাসছে কয়রা উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রাম। বুধবার দুপুরে ঘূণিঝড় যশ ও পূর্ণিমার অতিমাত্রায় জোয়ারের পানিতে উপজেলার শাকবাড়ীয়া ও কপোতাক্ষ নদীর প্রায় ৩০ কিলোমিটার বেঁড়িবাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে লবণ পানি প্রবেশ করে। এ ছাড়া উত্তর বেদকাশির গাতীরঘেরি ও মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ী গ্রামের বেঁড়িবাঁধ ভেঙে ৪ টি গ্রাম প্লাবিত হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ায় বুধবারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বেড়িবাঁধ ভেঙে যেতে থাকে।

বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টার মধ্যে দক্ষিণ বেদকাশির আংটিহারা, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া গ্রামের অর্ধ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নতুন করে ভেঙে যাওয়ায় কয়রা খুলনা সড়কের কালনা ও অন্তাবুনিয়া গ্রামে ৩ কিলোমিটিার সড়ক সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার ৩ টি ইউনিয়নে ৫ টি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেলেও প্লাবিত হয়েছে ৪ টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে মহারাজপুর ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউপির ৩৫ টি গ্রামসহ উত্তর বেদকাশি ও কয়রা ইউপির ১২ টি গ্রাম এখন লবণ পানিতে ভাসছে। তবে উপজেলা সদর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ছে।

বিভিন্ন সূত্রে খবর নিয়ে জানা গেছে, উত্তর বেদকাশি গাতিরঘেরী, বিনাপানি, পদ্দপুকুর ও হরিহরপুর গ্রামে ৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে তিল পরিমাণ জায়গা না থাকায় অধিকাংশ মানুষের ঠাঁই হয়েছে বেড়িবাঁধের খোলা আকাশের নিচে। অনুরূপ উত্তর ও দক্ষিণ মঠবাড়ী গ্রামে ভাসমান মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় না পেয়ে বেড়িবাঁধে উঠেছে। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় হাজারও চিংড়ী ঘের, শতশত বাড়ি ঘর ভেসে গেছে।

কয়রার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন সমাজকল্যাণ যুব সংস্থার সভাপতি মো. আবু সাঈদ খান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ করেছে স্বাধীন সমাজকল্যাণ যুব সংস্থার সদস্যরা। বুধবার সন্ধ্যায় বেড়িবাঁধ মেরামত করার পরে বৃহস্পতিবার দুপরে আবারো কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের আংটিহারা এলাকার শ্রীপদ মন্ডলের বাড়ির সামনে প্রবল জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। মদিনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা ইমদাদুল হক বলেন, দশালিয়ার বেড়িবাঁধ বুধবার মেরামত করার পর বৃহস্পতিবার আবারো ভেঙে গেছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সাগর হোসেন সৈকত বলেন, কয়রায় যশের তাণ্ডবে উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের সব এলাকায় কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। অনেক এলাকায় ঘর ভেঙে পড়েছে। অনেক এলাকায় ঘর আংশিক ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের সংখ্যা ৭ হাজার। এর মধ্যে ৫০ টি ঘর সম্পূর্ন ১ হাজার ২০০ ঘরবাড়ি আংশিক ও ৫ হাজার ৮০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সকল এলাকার মানুষ এখনও পানি বন্দি অবস্থায় দিন যাপন করছে। এর ফলে প্রায় লক্ষধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলা মৎস্য অফিসার এস এম আলউদ্দিন আহমেদ বলেন, জলোচ্ছ্বাসে কয়রা উপজেলায় ২ হাজার ১০০ মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া অসংখ্য মাছের পুকুর ডুবে গেছে। মৎস্যখাতে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কামিনীবাসিয়া ও ঝালবুনিয়া এলাকার ৪টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ নতুন করে ভেঙে গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে শিবসা ও ঢাকী নদীর জোয়ারের চাপে কোথাও ৩০ ফুট, কোথাও ৪৫ ফুট করে ভেঙ্গে যায়। ভাঙা বাঁধ প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করে তলিয়ে গেছে অসংখ্য গ্রাম। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পানখালী ইউনিয়নের ফেরিঘাটের পূর্বপাশে ১৫ ফুট ভেঙ্গে ঝপঝপিয়া নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে আশপাশের কয়েকটি গ্রাম।

এছাড়া জোয়ারে শিবসা নদীর পানির উচ্চতা ৩-৪ ফুট বেড়ে সুতারখালী ইউনিয়নের কালাবগি এলাকার ফকিরের কোনো দ্বীপ ও ঝুলন্তপাড়ার ৫০০ পরিবারে ঘর-বাড়ি পানির নিচে চলে গেছে। পশুর নদ তীরবর্তী বাণিশান্তা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরের প্রতিটি ঘরে এখন পানির নিচে। বাঁধ উপচানো পানিতে দাকোপের কালীনগর ও নলিয়ান বাজারের প্রতি দোকানে পানি প্রবেশ করেছে। নষ্ট হয়ে গেছে লাখ লাখ টাকার মালামাল।

স্থানীয়রা জানান, শিবসা নদীতে জোয়ারের উচ্চতা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ৩২ নং পোল্ডারের ৬-৭ স্থানে বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকেছে। ওই এলাকার ২০টি গ্রামে ঘরে ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে পশুর নদীর পানি উপচে চালনা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের প্রতিটি ঘরে পানি ঢুকে গেছে।

এদিকে পাইকগাছা উপজেলায় শিবসা নদীর জোয়ারের চাপে বৃহস্পতিবার দুপুরে নতুন করে লস্কর ইউনিয়নের কড়লিয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে আশপাশের প্রায় ৭-৮টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। কপোতাক্ষ নদের জোয়ারে ভেঙে গেছে রাড়ুলী ইউপির মালোপাড়া এলাকায় বাঁধের প্রায় ৪০ ফুট।

এছাড়া বাঁধ উপচানো পানিতে হরিঢালী ইউপির মাহমুদকাটি, মালোমাড়া, কপিলমুনি ইউনিয়নের আগড়ঘাটা বাজার সংলগ্ন পদ্মপুকুর এলাকা, লতা ইউপির লতা, ধলাই স্লুইস গেট, দেলুটি ইউনিয়নের মধুখালী, চকরি-বকরি, সোলাদানা ইউনিয়নের সোলাদানা বাজার, ভাঙাহাড়িয়া, পারশেমারী, নুনিয়াপাড়া, বেতবুনিয়া গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। বাজারে দোকানে দোকানে পানি উঠে যাওয়ায় লাখ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে।

পাইকগাছা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ভাটা হলেই বাঁধ মেরামত কাজ শুরু হবে। বুধবার ভেঙে যাওয়া বাঁধ সন্ধ্যার মধ্যেই মেরামত করা হয়েছিলো। রাতে ওই সব পয়েন্ট দিয়ে পানি প্রবেশ করেনি।

খুলনার ডিসি মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানান, গত দুই দিনে ১৬ ইউনিয়নে বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দুর্গত এলাকার প্রতিটি ইউনিয়নে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং ৫ টন জিআরের চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ১০০ প্যাকেট চাল, ডাল, বিস্কুটসহ খাদ্য সামগ্রী দেয়া হয়েছে।

Advertisement