Homeসব খবরজাতীয়কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা আপডেট হচ্ছে, আসছে সাঁড়াশি অভিযান

কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা আপডেট হচ্ছে, আসছে সাঁড়াশি অভিযান

কখনও জমি দখল, এলাকায় চাঁদাবাজি বা আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা। কখনও অলিগলিতে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব। তুচ্ছ সব ঘটনায় হাতাহাতি, মারামারি থেকে সংঘর্ষ। এমনকি খুনের মতো ঘটনাও ঘটছে। হঠাৎ সরব হয়ে ওঠা এসব সন্ত্রাসী গ্রুপের লাগাম টেনে ধরতে সন্ত্রাসীদের পুরোনো তালিকা আপডেট করছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। তারপরই একযোগে শুরু হবে সাঁড়াশি অভিযান, জানা গেছে গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে।

সূত্র বলছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট সন্ত্রাসী গ্রুপ ও কিশোর গ্যাং। এতোদিন বড় বা কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের নজরে রাখতে গিয়ে এলাকাভিত্তিক এই গ্রুপগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে পারেননি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এলাকাভিত্তিক এসব সন্ত্রাসী গ্রুপ ও কিশোর গ্যাংয়ের অধিকাংশই স্থানীয় রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে উঠেছে বলে তথ্য রয়েছে তাঁদের হাতে। তাই নতুন করে ছোট-বড় সব সন্ত্রাসীর তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে।

সম্প্রতি রাজধানীর পল্লবীতে জমি নিয়ে বিরোধে সন্তানের সামনে বাবাকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় টনক নড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। জানা গেছে, এই ঘটনার মূল হোতারা এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাং হিসেবে চিহ্নিত। ভবিষ্যতে এমন নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আঁটসাঁট বেঁধে কাজে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। দু’টি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানিয়েছে, যেসব গ্রুপের নামে একাধিক মামলা রয়েছে এবং এলাকার সাধারণ মানুষের তথ্যের উপর ভিত্তি করেই তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে।

তালিকা তৈরি হলেই সাঁড়াশি অভিযানে নামবেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, জানিয়েছেন দু’টি গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা। তাঁরা বলছেন, রাজধানীর ছোট-বড় ৫০টি এলাকায় শতাধিক কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা পাওয়া গেছে। মিলেছে অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপের নামও। এসব গ্রুপ বা গ্যাং কারা পরিচালনা করছে বা কাদের ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে উঠছে, সেই তালিকাও তৈরি হচ্ছে।

গোয়েন্দা সংস্থা দু’টির সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, রাজধানীর দক্ষিণখান, উত্তরখান, মোহাম্মদপুর, কামরাঙ্গীরচর, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, রায়েরবাগ, পুরান ঢাকার বংশাল, লালবাগ, মিরপুর ও এসব এলাকার আশেপাশে ছোট-বড় শতাধিক কিশোর গ্যাং রয়েছে। গ্যাংগুলোর মূল হোতারা সংশ্লিষ্ট এলাকায় সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য হিসেবেও জড়িত। আসন্ন অভিযানের স্বার্থেই গ্যাং সদস্যদের নাম প্রকাশ করতে চান না গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।

এই বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, আমাদের সদস্যরা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সদা তৎপর। শিগগিরই আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।

অপরাধীদের হালনাগাদ তালিকা তৈরির বিষয়ে র‌্যাব-এর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ খায়রুল ইসলাম বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ নানান ঘটনায় বেশকিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। খুন পর্যন্ত হয়েছে। সেসব এলাকার সন্ত্রাসী গ্রুপ এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। একইসংগে পুরোনো তালিকাও হালনাগাদ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কোনো কোনো কিশোর গ্যাং লিডারের বয়স ২৯-৩০ বছর। তারাই আবার স্থানীয় বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপে সম্পৃক্ত।

র‌্যাব-এর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান বলেন, আমরা কিশোর গ্যাংগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে অনেকে সমালোচনাও করেন। তবে আর নয়, এখন সময় এসেছে এসব নিয়ন্ত্রণের। আমরা কাজ শুরু করেছি। অচিরেই ইতিবাচক ফলাফল মিলবে, ইন শা আল্লাহ।

অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, সামাজিক-পারিবারিক অবক্ষয় এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারই এসব গ্রুপ বা গ্যাং গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ। তাঁরা বলেন, সম্প্রতি যেভাবে ছোটখাটো ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন পর্যন্ত হচ্ছে, তাতে লাগাম টানা খুব জরুরি। তাই তালিকা ধরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের পরিকল্পনাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন তাঁরা।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এই উদ্যোগের কার্যকর বাস্তবায়ন হলে সুফল মিলবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারি অধ্যাপক, সমাজ ও অপরাধ গবেষক তৌহিদুল হক। তিনি বলেন, সম্প্রতি যেসব খুন বা হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, এর অধিকাংশই হয়েছে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে। এসবের লাগাম টেনে ধরতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং কমিউনিটির সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সন্ত্রাসীদের তালিকা হালনাগাদ করার পরামর্শ দেন তৌহিদুল হক।-বাংলাভিশন ডিজিটাল

Advertisement