Homeঅন্যান্যএবার উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাতে পারে ভেনামি চিংড়ি

এবার উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাতে পারে ভেনামি চিংড়ি

শুক্রবার (৫ আগস্ট) দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে খুলনার পাইকগাছায় অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের লোনাপানি কেন্দ্রে এ চিংড়ি আহরণ করা হয়। এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। পরীক্ষামূলক চাষ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিন উৎপাদন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। উৎপাদনের এ চিত্র দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।

পরীক্ষামূলক উৎপাদনের প্রথম পর্যায়ে এক একর জমির পুকুরে ভেনামি চিংড়ি পাওয়া যায় ৪ হাজার ১০১ কেজি। যার সময়সীমা ছিল ১০৮ দিন। ঠিক এক বছর পর পরীক্ষামূলক উৎপাদনের দ্বিতীয় ধাপে একই পুকুরে ভেনামি চিংড়ি মিলেছে ৪ হাজার ৪৪৫ কেজি। যার সময়সীমা মাত্র ৮৮ দিন। সেই হিসাবে গত বছরের তুলনায় এবার ২১ দিন কম চাষেও উৎপাদন বেড়েছে ৩৪৪ কেজি। যশোরের এম ইউ সি ফুড লিমিটেড নামক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয়বারের মতো এ চিংড়ির চাষ করেছে।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস হুমায়ুন কবির বলেন, গত বছর হেক্টরপ্রতি ভেনামি চিংড়ির উৎপাদন হয়েছিল ১০ হাজার ৪০০ কেজি। আর এবার উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার কেজি। এমনকি ২১দিন কম চাষ করেও হেক্টরপ্রতি ৬০০ কেজি উৎপাদন বেশি হয়েছে। পরীক্ষামূলক উৎপাদনের দ্বিতীয় ধাপেও সাফল্য ধরা দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, এক হেক্টর জমিতে সনাতন পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করলে বছরে উৎপাদন হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ কেজি। অথচ একই জমিতে উন্নত পদ্ধতিতে ভেনামি চিংড়ি চাষ করলে উৎপাদন হয় ১০ টনেরও বেশি। কিন্তু এখনও বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের অনুমতি দেয়নি সরকার। এ ছাড়া পাইলট প্রকল্প হওয়ায় এই খাতে কোনো ব্যাংক ঋণ দেয় না। এ কারণে অবিলম্বে বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

এম. ইউ সি ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাস বলেন, ‘গত বছর প্রথম চাষ করে আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। যা এবার কাজে লেগেছে। যার ফলাফলও পাওয়া গেছে। দু’ বারের পরীক্ষামূলক চাষে আমরা সফল হয়েছি। ফলে সরকার এখন ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষের অনুমতি দিতে পারে। বাণিজ্যিক চাষের অনুমতি মিললে বিশ্ববাজার ধরা সহজ হবে।’

জানা গেছে, ১৯৭০ সালে প্রথম আমেরিকায় ভেনামি চিংড়ি চাষ হয়। বিশ্ববাজারের ৮০ শতাংশ রপ্তানি খাত দখল করে আছে এই চিংড়ি। খরচ কম উৎপাদন বেশি। অল্প জায়গায় অধিক লাভ— এমন সম্ভাবনা নিয়ে গত ২০ বছর ধরে বিএফএফইএ এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার প্রথম প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রজেক্টের মাধ্যমে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের ৩০টি কোম্পানি আবেদন করলেও যাচাই-বাছাই শেষে ৮টিকে সরাসরি এবং চারটি কোম্পানিকে শর্তসাপেক্ষে লাইসেন্স দেওয়া হয়। এরমধ্যে এম ইউ সি ফুড খুলনায় প্রথম ভেনামি চিংড়ি চাষ শুরু করে। প্রথমবার অভাবনীয় সাফল্যের পর কোম্পানি মালিকসহ সাধারণ কৃষকের মাঝে ভেনামি চিংড়ি চাষ আলোড়ন সৃষ্টি করে।

তিনি আরও বলেন, ‘গত ২০ বছর ধরে বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভেনামি চিংড়ি চাষ করার জন্য আমরা সরকারের কাছে আবেদন করতে থাকি। এই ধারাবাহিকতায় সরকার আমাদের প্রাথমিকভাবে ৮টি কোম্পানিকে সরাসরি এবং চারটি কোম্পানিকে শর্তসাপেক্ষে লাইসেন্স দেয়।’

Advertisement