Homeসব খবরজাতীয়ইসরাইলকে সহযোগিতাকারীরাও সমান অপরাধী : ডা: জাফরুল্লাহ

ইসরাইলকে সহযোগিতাকারীরাও সমান অপরাধী : ডা: জাফরুল্লাহ

ফিলিস্তিনে আগ্রাসন চালাতে অস্ত্র দিয়ে, অর্থ দিয়ে ও কূটনৈতিক ভাবে ইসরাইলকে যারা সহযোগিতা করছে তারাও সমান অপরাধী বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বুধবার জাতীয় শহীদ মিনারে ইসরাইলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি বঙ্গবন্ধুকে নেতা হিসেবে শ্রদ্ধা করেন তবে তার কাজ হবে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা এবং তা কার্যকর করা। সর্বদলীয় কমিটি করে ফিলিস্তিনসহ পাকিস্তান, তুরস্ক এমন সবাইকে নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে তুলে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো। তাহলেই মানবতাবিরোধী পাশ্চাত্য শক্তি সজাগ হবে। তা না হলে ফিলিস্তিনের প্রতি সহমর্মিতার কথা বলা ভাঁওতাবাজি হবে। ফিলিস্তিনির পাশে থেকে তাদের বিজয় অর্জনে সহযোগিতা করাটাই হবে সত্যিকার অর্থে মানবতার কাজ।

‘তাই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা করা উচিত- ফিলিস্তিনিদের এই বেঁচে থাকার আন্দোলনে অর্থ দিয়ে, সামরিক অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করবে।’ ডা: জাফরুল্লাহ বলেন, শুক্রবার জুমার পরে সকল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের একত্রিত হয়ে জায়নবাদী দেশগুলোর দূতাবাস ঘেরাও করেন। আমিও আপনাদের সাথে থাকবো।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এবং তাদের সর্বোচ্চ নেতার বিচারের দাবি করে সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, ইসরাইলের মতো একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমর্থন করা নিন্দনীয়। এসময় ফিলিস্তিন ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের নিরব থাকারও কঠোর সমালোচনা করে আসিফ নজরুল বলেন, আমি জোরালো ভাবে বলছি, আরবদের সম্মিলিতভাবে ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকা উচিৎ।

তিনি বলেন, ইসরাইলিরা যখন ফিলিস্তিনিদের উপর গুলি চালায় তখন পশ্চিমারা বলেন, ‘এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’ ঠিক আমাদের দেশে যখন নুরদের উপর হামলা চালানো হয় তখন তারা প্রতিরোধ করলে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়। আমরা আজকে সাংবাদিক রোজিনার ক্ষেত্রেও দেখি, যিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছেন তার বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়েছে। এটাই নিপীড়নকারীদের কৌশল। তারাই আক্রমণ করবে, তারাই আবার মামলা করে হয়রানী করবে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জনগণের প্রতিবাদ করার ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। সব কিছু বলবে সরকার, আমরা কোনো কিছু বলতে পারব না। আজকে মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা আমরা এখানে সভা করে বলতে পারব না। কিন্তু সরকার তো বলতে পারতো। জাতিসঙ্ঘ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে নেতানিয়াহু কর্ণপাত করছে না। এই সামগ্রিক বিষয়ে সরকার চাইলে তো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারত। কিন্তু এরা শুধু সত্যকে মিথ্যা বানানোর চেষ্টা করে, যেটা সাংবাদিক রোজিনার ক্ষেত্রে হলো। যদি এদের সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়তে না পারি তাহলে এরকম একটা-দুইটা সমাবেশ করে কোনো কাজ হবে না।

ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধে বিশ্ব নেতাদের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা উলফাত আজিজ বলেন, ফিলিস্তিনিরা নিজ দেশের ভূমির জন্য একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করছে। ইসরাইলি অগ্রাসনে শিশু, নারীসহ হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ গণহত্যার শিকার হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, আজকে এই সমাবেশ থেকে ফিলিস্তিনিতে ইসরাইলি হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা তাদের পাশে অতীতে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকবো। এসময় তিনি অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে হেনস্থার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তার নিঃশর্ত মুক্তি চান।

আলোকচিত্রী শহিদুল হক বলেন, এই আগ্রাসন শুধু ইসরাইল করে না, যারা তাদের সহযোগী তারা সবাই এই অগ্রাসন করে। শিশুদের উপর শুধু ইসরাইলিরা বোমা মারে না। যারা ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে সহযোগিতা করে তারা সবাই এই বোমা মারে। বাঙালি হিসেবে আমাদের সকলের উচিৎ সকল নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলা।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ফিলিস্তিনিদের যেখানে শত বছর ধরে বসবাস সেখানে ইসরাইল তাদের সামরিক শক্তির বলে গত সত্তর বছর যাবৎ গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এই জায়নবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর সঞ্চালনায় নাগরিক সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ফিলিস্তিনি দূতাবাসের প্রতিনিধি আব্দুর রহমান, গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা রেহনুমা আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা সাদেক আহমেদ খান, গণ দলের চেয়ারম্যান গোলাম মাওলা চৌধুরী, গণফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য অ্যাডভোকেট হাসানাত কাইয়ুম, নারীর জন্য সুশাসনের পরিচালক রুবি আমাতউল্লাহ, গণসংহতির আবুল হোসেন রুবেল, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মদলের সভাপতি কালাম ফয়েজি প্রমুখ।

Advertisement