Homeসব খবরবিনোদনআসলে মানুষ সংস্কৃতি কাকে বলে সেটাই জানে না :...

আসলে মানুষ সংস্কৃতি কাকে বলে সেটাই জানে না : মিশা

অভিনেতা মিশা সওদাগর। প্রায় ৪ দশকের ক্যারিয়ারে অনেক নায়ক-নায়িকা তার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন। তাদের বেশিরভাগই এখন পর্দার আড়ালে। তবে নিজের শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখে এখনও নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন মিশা সওদাগর। ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘদিনেও তৈরি হয়নি তার বিকল্প। গুণী এই অভিনেতা ইন্ডাস্ট্রির নানা বিষয় নিয়ে কথা বললেন।

আসছে ঈদে আপনার কোন কাজগুলো দর্শকরা দেখতে পাবেন?

‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’, কিল হিম’, ‘আগুন’ সিনেমা তিনটি মুক্তি পাবে। এর বাইরেও একাধিক ছবি মুক্তির কথা শুনতে পাচ্ছি। এছাড়া এরইমধ্যে শেষ করেছি ‘কুস্তিগির’, ‘বাহাদুর’, ‘প্রেমের বাঁধন’, ‘আমার মা আমার ভেহেস্ত’, ‘শত্রু’, ‘লোকাল’ ছবিগুলো। হাতে রয়েছে ‘নাইন এমএম’, ‘নয়নতারা’, ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’, ‘আহারে জীবন’সহ বেশ কয়েকটি ছবি। পাশাপাশি ঈদে আমার অভিনীত কয়েকটি নাটক বিভিন্ন টিভিতে প্রচার হবে। নাটককে তো অভিনয় করি না। তবে এবার অনেক অনুরোধের পর রাজি হলাম। কারণ গল্পগুলোও বেশ ভালো ছিল।

দেশের সিনেমায় নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনার সুযোগ কতটা রয়েছে?

ভিন্নতা আমি তখনই বলবো যখন দেখবো একটা ঐতিহাসিক চরিত্রের জন্য ৩-৪ বছর নিজেকে প্রস্তুত করছি। তারপর বড় অ্যারেঞ্জমেন্টে কাজটি সম্পন্ন করে মুক্তি দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের তো সেই সুযোগ নেই বললেই চলে। অন্যদিকে কমার্শিয়াল সিনেমায় তো ভিন্ন মিশাকে দেখবে না দর্শকরা। কারণ ছবিগুলোতে আমিই অভিনয় করছি, আমার ভয়েজই থাকছে। তবে ঈদের ছবিগুলোতে কী ভিন্নতা থাকছে সেটা এখনই বলছি না। সিনেমাগুলোর জন্য আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি সেটা দর্শকরা হলে গেলেই বুঝতে পারবেন।

ইদানিং অনেকের নামের আগেই সুপারস্টার, জনপ্রিয়, দর্শকনন্দিতের মতো অসংখ্য বিশেষণ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

দেখুন, সুপারস্টার কাকে বলে সেটা আগে আমাদের জানতে হবে। মনে হলো, আর তেলবাজি করে একটা বিশেষণ যোগ করে দিলাম তাহলে তো হবে না। কেন লিখছি ঢালিউড স্টার, ঢালিউড কুইন! তারা কী ইন্ডাস্ট্রির জন্য অপরিহার্য? আমার মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রির জন্য যারা অপরিহার্য তারা সুপারস্টার। আমাদের যদি সেই সুপারস্টার থাকতো তাহলে সিনেমা বন্ধ হওয়া উপক্রম হতো না।

কাজ না জানা অনেকেই এখন নির্মাতা-অভিনেতা বনে যাচ্ছে। এটাকে অবক্ষয় বলবেন কি-না?

অবশ্যই এটাকে সামাজিক অবক্ষয় বলবো। খুবই কষ্ট লাগে যখন এ ধরনের কার্যকলাপ দেখি। আর অভিনয় করব কি-না, সেটাই ভাবি। ইউটিউব আসার কারণে কথিত নির্মাতা-শিল্পীর সংখ্যা আরও বেড়ে গেছে। আসলে মানুষ সংস্কৃতি কাকে বলে সেটাই জানে না! অপসংস্কৃতি বোঝা তো পরের কথা! আমাদের সমাজের কয়টা পরিবার আছে যারা নিজেদের সন্তানকে নাচ-গান শেখাতে আগ্রহ দেখান। আমাদের কয়জন মন্ত্রী, সচিব, প্রশাসক, ব্যবসায়ী ছেলেমেয়েকে নাচ-গান-অভিনয় শিখিছেন, আমি জানতে চাই! যাদের সংস্কৃতির ধারক-বাহক হওয়ার কথা ছিল তারা এখন ভোগের ধারক-বাহক হয়ে বসে আছেন।

গতবছর বেশ কয়েকটি সিনেমা দর্শকদের হলমুখী করেছিল। কিন্তু চলতি বছর এখন অবধি কোনো সিনেমা আশা জাগাতে পারেনি। এর কারণ কী মনে করছেন?

আসলে ‘হাওয়া’, ‘পরাণ’সহ যে সিনেমাগুলো দর্শকদের হলমুখী করেছিল সেই সিনেমাগুলো কিন্তু দীর্ঘ সময় নিয়ে, শিল্পীদের রিহার্সেল করিয়ে ওই চরিত্রে পরিণত করে, অনেক যত্নের সাথে নির্মাণ করা হয়েছিল। সেখানে দর্শকরা যেমন গল্প-অভিনয়ে ভিন্নতা পেয়েছে তেমনি নির্মাণও ছিল ভালো । সিনেমাগুলোতে নিজেদের এবং যুগোপযোগী গল্পের পাশাপাশি দারুণ গানও দর্শকদের মুগ্ধ করেছিল। এ বছর এখনও সময়যোপযোগী গল্পের সিনেমা দর্শকরা পায়নি। আসলে সুপারডুপার হিট সিনেমা বানাতে হলে ভালো শিল্পী, নির্মাতা-কলাকুশলীদের নিতে হবে, বড় বাজেটে ভালো জায়গায় শুটিং এবং বিশেষ দিনে মুক্তি দিতে হবে। সেটা তো হচ্ছে না। তবে আমাদের মেধা আছে, কিন্তু বিকাশের সুযোগ নেই ।

নাট্যব্যক্তিত্ব ও অভিনেতা মামুনুর রশীদের একটি মন্তব্য ঘিরে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। আপনি বিষয়টি নিয়ে কী মন্তব্য করবেন?

প্রথমত, মামুনুর রশীদ সাহেব যে কথাগুলো বলেছেন তার জন্য তাকে স্যালুট। আমি হিরো আলমকে ছোট করছি না। সে তার জায়গা থেকে নিজের কাজ দিয়ে একটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে আমরা কেন এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি? আমরা তো তাকে আরও বিখ্যাত করে দিচ্ছি। মামুনুর রশীদ একটা কথা বলেছেন বলে তার ছবির সঙ্গে হিরো আলমের ছবি যুক্ত করে নানা কথা প্রচার করছি। কোনো কিছু বাছ-বিচার করছে না কেউ। একজন মামুনুর রশীদ একদিনে তৈরি হননি। সারাটা জীবন মঞ্চ এবং অভিনয়ে ব্যয় করেছেন। উনি প্রতীকী একটি শব্দ ব্যবহার করেছেন বলে সবাই সমালোচনা করছি, অপমান করছি! আমাদের অবক্ষয় কতটা হয়েছে বুঝতে পারছেন?

সূত্র: ইত্তেফাক।

Advertisement