Homeসব খবরজেলার খবরআবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন বেড়েছে শীতের সবজির

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন বেড়েছে শীতের সবজির

এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষকরা। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবারগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে। ক্ষেতগুলোতে এখন কৃষকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। উত্তর জনপদের শষ্য ভান্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার প্রতিটি মাঠ জুড়ে এখন সবুজের হাতছানি। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ।

পূবালি বাতাস, শিশির ভেজা কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে কৃষকেরা জমিতে হাল চাষ, চারা রোপণ, ক্ষেতে পানি ও ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করাসহ নানা কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। শুধু নিজেদের চাহিদাই নয়, বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এসব সবজি। শীতের শুরুতে সিরাজগঞ্জের পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে বিভিন্ন জাতের সবজি পাঠাবে এ উপজেলার কৃষকরা। সবুজে সবুজে ভরে উঠছে ফসলের মাঠ। বির্স্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে সারি সারি সীম গাছের ডগা, শোভা পাচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, লাউ, শিম, বেগুন, মুলা, করলা, পটোল, পালং ও লাল শাকসহ রকমারি শীতকালীন সবজির চারা। তাই মাঠে মাঠে এসব ফসল পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত কৃষকরা।

বিকাল অবধি মাঠেই চারার গোড়ায় পানি ঢেলেই ফিরছেন সবাই বাড়ি। তাদের কেউ দাঁড়িয়ে কোদাল চালাচ্ছেন, অনেকেই গাছের গোঁড়ালির পাশ দিয়ে ঘোরাচ্ছেন নিড়ানী, কেউবা খালি হাতেই গাছগুলো ঠিক করছেন। কেউ বা নেতিয়ে পড়া চারার স্থলে সতেজ চারা প্রতিস্থাপন করছেন, এভাবে শীতকালীন সবজি নিয়ে চলছে কৃষকের কর্মযজ্ঞ। বেড়েই চলছে কৃষকদের কাজের চাপ। ধান চাষে তেমন একটা সুবিধা করতে পারছেন না অনেক কৃষক। কোনোভাবেই লোকসান ঠেকাতে পারছেন না তারা। তাই রকমারি সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন উপজেলার অনেক কৃষক। কাক ডাকা ভোরে কোদাল, নিড়ানী, বালতি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে এখন কৃষকরা। ক্ষেতে নেমে পড়েন সবজি পরিচর্যায়।

উপজেলার হাটিকুমরুল এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক, সালাম, ফরিদুল, আরও অনেকে বলেন, সবজি চাষের জন্য খুব বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। তুলনামূলক ভাবে মূলধনও কম লাগে। পরিশ্রমও তুলনামূলক কম। তবে সেবা ক্রটি করা যাবে না। কিন্তু রোগবালাই দমনে সবজি ক্ষেতে কীটনাশক বেশি প্রয়োগ করতে হয়। স্বল্প সময়েই সবজি বিক্রি উপযোগী হয়ে ওঠে। প্রায় প্রতিদিনই বাজারে সবজি বিক্রি করা যায়। পরিবারের চাহিদাও মেটানো সম্ভব হয়। ক্ষেতে সবজি থাকা পর্যন্ত প্রত্যেক কৃষকের হাতে কমবেশি টাকা থাকে। যা অন্য ফসলের বেলায় সম্ভব না। এছাড়া চলতি মৌসুমে সবজির দামও বেশ ভালো। সবমিলিয়ে সবজি চাষকেই এসব কৃষকরা লাভজনক মনে করছেন।

সবজির কদর সারাদেশেই রয়েছে। তবে তা আগাম চাষ করতে পারলে আরও বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে কী’টনাশকমুক্ত সবজি চাষ করা সম্ভব। সবজি ক্ষেতে পোকামাকড় আ’ক্রমণ করবেই। সেজন্য কী’টনাশক ব্যবহার না করেই আধুনিক বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন করা সম্ভব। সবজি ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার অনেকটাই কম থাকায় সবজি গুনগত মানে সেরা হওয়ায় চাহিদাও অনেক বেশি বলে জানা তারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমি জানান, কৃষকদের সবজি চাষে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। বর্তমানে সীম, বেগুন, আলু, লালশাক, মুলা শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো এর আবাদ চলছে বলে তিনি জানান। সবজি চাষে যুক্ত উপজেলার কৃষকরা এবার বেশ উৎফুল্ল। কারণ তারা প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশের জন্য এবার উৎপাদিত ফসলের ফলন ও দাম বেশ ভালো পাবেন বলে তিনি মনে করছেন।

কৃষি বিভাগের লোকজনরা নিয়মিত মনিটরিং কারায় আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বাড়ায় কৃষকদের মুনাফাও বেড়েছে কয়েকগুণ। চাষিরা এখন বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে বলেও জানান তিনি।

Advertisement