এক জয় ও এক হার। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অবস্থা। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। পয়েন্ট তালিকায় শুধু শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান বা নেদারল্যান্ডস নয়, অস্ট্রেলিয়াও বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে। কিন্তু এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আসলেই তাদের স্বপ্ন (সেমিফাইনালে ওঠার) ছুঁতে পারবে কি না সেটা বোঝা যাবে আজই, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
প্রথমেই আজকের ম্যাচের উইকেট ও কন্ডিশন সম্পর্কে একটু ধারণা নেওয়া যাক।
ভেন্যু: চিদম্বরম স্টেডিয়াম, চেন্নাই
দর্শক ধারণক্ষমতা:
৩৮২০০, তবে অস্ট্রেলিয়া-ভারত ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩৩ হাজার দর্শক এসেছিলেন।
সীমানা:
এই মাঠে অনেকগুলো উইকেট। ফলে উইকেটের অবস্থানের ওপর নির্ভর করবে সীমানার অবস্থান। সাধারণত অফ ও অন সাইডে ৬৮ মিটার এবং লংয়ের সীমানা প্রায় ৬৬ মিটার দূরত্বে সীমানাদড়ি থাকে ।
কন্ডিশন ও নিরাপদ স্কোর:
এই মাঠে টস অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ, আগে বা পরে ব্যাট করে প্রায় সমান জয় এখানে। বিশ্বকাপে এই মাঠের প্রথম ম্যাচে টস হেরে পরে ব্যাট করেও জয় পেয়েছিল ভারত।
তবে এটাও ঠিক, ভারতের সবচেয়ে ধীরগতি ও বাড়তি আদ্রতার এই স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে রান তোলাটা তুলনামূলক সহজ। এখানে প্রথম ইনিংসের গড় আড়াই শর নিচে থাকে। দ্বিতীয় ইনিংসে সেটা ২২০ এর কাছাকাছি।
বিশ্বকাপের জন্য আরেকটু ব্যাটিং সহায়ক উইকেট বানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, এমন এক খবর এসেছিল। কিন্তু প্রথম ম্যাচে কোহলি-রাহুলদের রান পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কী করতে হবে?
অস্ট্রেলিয়া-ভারত ম্যাচের উইকেটে খেলা না হলেও শেষ পর্যন্ত এটা চেন্নাইয়ের উইকেট। এবং শুকনো মাটির উইকেটে স্পিনাররাই দাপট দেখাবেন।
স্পিন:
স্পিনসহায়ক উইকেট বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা বলে। তবে কদিন আগে মিরপুরে ইশ সোধি দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা জানেন। তবে ইশ সোধি এখনো পর্যন্ত দলেই সুযোগ পাননি বিশ্বকাপে।
তবে যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের স্পিনারদের সঙ্গে পালা দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন মিচেল স্যান্টনার। এবং এরই মধ্যে হায়দরাবাদে বল একটু থেমে আসছিল, এমন উইকেটে পাঁচ উইকেট পেয়েছেন তিনি। এমনকি সেদিন রাচিন রবীন্দ্রও পেয়েছিলেন দুই উইকেট। তবে বাংলাদেশের টপ অর্ডারে তিনজন বাঁহাতি আছেন। এমন পরিস্থিতিতে আজ দলের সমন্বয় বদলে সোধিকে নিউজিল্যান্ড নামিয়েও দিতে পারে।
তবে এটাও ঠিক, চেন্নাইয়ের উইকেটে অনেক স্পিন এমন নয়। বরং উইকেটের দ্বিমুখী আচরণ, বল থেমে যাওয়া এবং স্পিন হচ্ছে না- এমন বলই মূল দুশ্চিন্তা। এবং এ ধরনের বোলারের দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে। দ্বিতীয় ম্যাচে একটি পরিবর্তন এনেছিল বাংলাদেশ। এই ম্যাচেও আরেকটি পরিবর্তন আশা করা যায়।
নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপে পাঁচজন বাঁহাতি বলে দুজন বাঁহাতি স্পিনারকে খেলানো ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হতে পারে। কিন্ত আজ কেইন উইলিয়ামসন ফিরবেন, এতে বাঁহাতির সংখ্যা একজন কমবে। এবং চেন্নাইয়ের উইকেটে নাসুমকে না নামানো অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে। এখন পর্যন্ত নতুন বলে কাঙ্খিত শুরু পায়নি বাংলাদেশ। নাসুম এ দিকটাতেও দলকে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন।
ব্যাটিং:
ব্যাটিংয়ের দিক থেকে এই উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিংই এগিয়ে থাকবে। বছরের পর বছর মিরপুরে খেলার অভিজ্ঞতা যদি কোনো উইকেটে বাংলাদেশকে সাহায্য করে, সেটা চেন্নাইয়ে।
বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত ওপেনিং জুটি ভালো কিছু করতে পারেনি। টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান দুই ওপেনারের কাছ থেকে দুই বা তিনটি ভালো ইনিংস চেয়েছিলেন। লিটন একটি ফিফটি পেলেও সে ইনিংস ম্যাচ জেতানোর কাজে নয়, ধস সামলানোর কাজেই লেগেছে। চেন্নাইয়ের উইকেতে আজ ওপেনিংয়ে একটা ভালো জুটি বাংলাদেশকে অনেকটাই এগিয়ে দেবে। তবে তা না পেলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২ রানে ৩ উইকেট হারিয়েও ম্যাচ জিতেছে ভারত।
অন্যদিকে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত দুই ম্যাচেই অন্তত একজন ওপেনার ভালো শুরু পেয়েছেন নিউজিল্যান্ডের পক্ষে। তিনে নেমে রাচিন রবীন্দ্রও পেয়েছেন একটি সেঞ্চুরি ও একটি ফিফটি। আর বাংলাদেশের পেসাররা দুই ম্যাচেই ওপেনিং জুটি ভাঙতে ব্যর্থ হয়েছেন।
পেস:
চেন্নাইয়ের উইকেট বাংলাদেশের একজন পেসারের জন্য টেইলর-মেড। এখানে গতি নয়, সুইং ও বৈচিত্র্য মূল ভরসা। এবং মোস্তাফিজুর রহমানের জন্য আজই সেরা সুযোগ নিজেকে প্রমাণ করার। শরীফুলও গত ম্যাচে স্লোয়ারে নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন। আজ তাসকিন আহমেদকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। আজ পেস আক্রমণে পরিবর্তন দেখার সম্ভাবনা তাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সুইংয়ের কথায় দুই দলে সবচেয়ে এগিয়ে ট্রেন্ট বোল্ট। স্বস্তির বিষয়, এখনো পুরোপুরি ম্যাচ ফিট নন বলে টিম সাউদি আজও খেলবেন না বলে জানা গেছে। ফলে নিউজিল্যান্ডের অন্য পেসারদের বিপক্ষে অন্তত বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা স্বচ্ছন্দে থাকবেন।
তবে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ভালো বলে আউট হতে কমই দেখা গেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। উইকেট ছুঁড়ে দেওয়ার অভ্যাস না থামাতে পারলে, উইকেট-কন্ডিশন-দলের সমন্বয় নিয়ে এত আলোচনা শুধুই বাজে আলোচনা।